আলাউদ্দিন আল আজাদের গল্প- জলটুঙি

Mostafizur Rahman
Mostafizur Rahman

Mostafizur Rahman is a professional content writer at CrawlText, specializing in SEO articles, blog posts, and web copy that drive engagement and conversions. With experience crafting clear, audience-focused content for almost all the niches, he delivers well-researched, optimized pieces on deadline. He combines editorial rigor with keyword strategy to boost traffic, authority, and reader retention across blogs, platforms, and newsletters.

আলাউদ্দিন আল আজাদের গল্প

জলটুঙি

অবিশ্রাম, দেয়াল ঘড়িটাও শব্দ করে চলে, টক্ টক্ টক্ টক্।

সে আসবে। সে আসবে আজ রাত সাড়ে আটটায়। এই একটি সম্ভাবনা সমস্ত বাড়িটাকে গানের কলির মতো বেঁধে রেখেছে। তাই না এত সংশয়। তাই না তার অভ্যর্থনার জন্য এত কৌশল।

চারদিকে থমথমে নীরবতা। অন্ধকারের পর্দা গাছপালার আশ্রয়ে নেমে পৃথিবীকে পুরোপুরি ঢেকে ফেলতে না পারলেও, দুশ্চিন্তার কালো মেঘে একটি মানুষের মুখমন্ডল ছায়াচ্ছন্ন। চলাফেরায় কেমন একটা সতর্ক চাঞ্চল্য। কোনো দুঃসহ স্মৃতির ভার কপালের বলিরেখাকে প্রত্যক্ষতর করে তুলেছে।

পেছন দিককার বারান্দাটা এতক্ষণ খালি ছিল। আমেনাবিবি ব্যস্তভাবে ঘরের ভেতর থেকে বেরিয়ে এলেন। সেখানে দাঁড়িয়ে ডাকলেন, ‘রুবি, ইদিকে আয় তো মা।’

রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে হাতমুখ ধোয়ার জন্য রাবেয়া কুয়া থেকে পানি তুলছিল। মায়ের অর্থপূর্ণ ডাক শুনতে পেয়ে চমকে ওঠল। তাহলে, সময় হয়ে এসেছে কি? এখনো তো সরজমিনে রাতই হয়নি? বালতিটা গোসলাখানার পাকায় রেখে খসে যাওয়া আঁচল কোমরে ভাল করে পেঁচিয়ে সে প্রায় ছুটে গেল।

উত্তরের কামরাটা নেহাত ছোট নয়। এটাকে বলা যায় বাড়ির মধ্যমণি। জামাকাপড় থেকে শুরু করে আয়ব্যয়ের হিসেব-ধরা কাঠের সিন্দুকটা পর্যন্ত সবকিছু এ ঘরেই থাকে। ছেলেপুলেরা অভিভাবকের শ্যেনদৃষ্টি এড়িয়ে কদাচিৎ ঢুকে পড়লেও, ইঁদুরের মতো খুটখাট করতে পারে না। নীরবতাকে বজায় রেখেই বেবিয়ে আসে বুদ্ধিমানের মতো। সংসারের টুকিটাকি জিনিশপত্রও এখানেই থাকে, প্রয়োজনের সময় সেগুলো গৃহিনীর হাতে দিয়ে আলো দেখবার অধিকার পায়।

সে আসবে। মাথাটা কাত করে চৌকির নিচে ঢুকিয়ে আমেনা একটা  টিনের বাক্স বার করলেন। শাড়ির প্রান্তে বাঁধা চাবির গোছাটা ধরে চট করে তালাটা খুলে ফেললেন। সাবধানী হাতের টানে ভেতর থেকে বেরিয়ে এল সুন্দর শিল্পকাজ করা কয়েকটি চীনামাটির বাসন। একটি কাচের গেলাস। একটি নিমকদান। আর কয়েকটি বাটি। মেয়েকে প্রায় ফিসফিস্ করে বললেন, ‘যাতো মা। এগুলি ধুয়ে আন্।’

রাবেয়া দু’হাতে আসবাবগুলো আগলে ধরে বেরিয়ে গেল সাবধানে।

ঈদ গেছে গতকাল। টানাটানি নিত্যকার হলেও বছরের পবিত্র দিনটিকে উৎসবমুখর করে তোলার জন্যে আনিস মুন্সি চেষ্টার ত্রুটি করেননি। বিবির জন্য নতুন কাপড় কিনেছেন। বাজারের সেরা না হলেও দেখতে মন্দ নয়। মেয়েটার জন্য কিনেছেন একটা নীলপেড়ে শাড়ি। বেশ চড়া দামেই। ছোটদের জন্য রবারের জুতো। রঙচঙে টুপি। এ ছাড়া মিষ্টি, মাংস দুধ, ফলমূলও কম পয়সা টানেনি। কিতাবে লেখা আছে, ঈদের দিনে আনন্দ কর, এখন দাঁত কামড়ে থাকলে চলেনা।

এ উপলক্ষ্যে মহল্লার একমাত্র মসজিদের মুয়াজ্জিন ও ইমাম হিসেবে তিনি দাওয়াত কম পান না বাইরে। কোনদিন কার বাসায় যাবেন তা তো তেলচিটচিটে নোট বইটাতে টুকে না রাখলে জবান খেলাপ করার বিপদে পড়তে হয়। এর পাল্টা আয়োজন না করলেও চলে। তবু সামাজিকতাকে উপেক্ষা করা চলে না। তাই তিনিও পাড়াপড়শী গণ্যমান্য ব্যক্তিদের জিয়াফত করতে ছাড়েন না।

গতকাল এমনি জলসায় বাড়িটা গুলজার হয়ে ওঠেছিল। ঢালা সতরঞ্জি, তার ওপর পাঁচহাতি নল-লাগানো ফর্সি হুঁকায় ধোঁয়া ও আগরবাতির সুগন্ধি মিলে এমনি দেলখোশ পরিবেশ বেহেশতের হুর গেলমান থেকে রেশনের চিনি পর্যন্ত আলোচনার কোন বিষয়ই বাদ যায়নি। কিছুক্ষণ পর পর খুসখুসে হাসির রোল উঠছিল। আর তখন মুন্সির উৎসাহের বাঁধ যেন ভেঙে গেছে, ঘন ঘন অন্দরমহলে যাওয়া-আসা ও অন্যদের ওপর বেপরোয়া হুকুম চালানোর মধ্যে তারই ফেনিলতা পড়ছিল উপচে উপচে।

আমেনাবিবি কিন্তু একবারে উদাসীন। তাঁরই বাড়িতে এতো হৈচৈ হচ্ছে, আর তাঁর কানের মাকড়িদুটোও নড়ছেনা, এ অস্বাভাবিক। মুন্সি হন্তদন্ত হয়ে এসে বললেন, ‘সবাই এসে গেছে। আর দেরি করে লাভ নেই।’

‘ওখানে সব সাজানো আছে।’ ডেগ-ডেগচি বাসনকোসন আঙুল ইশারায় দেখিয়ে পান চিবোতে লাগলেন। যেন তাঁর কিছু করার নেই। মেয়েটাকে ডেকে বললেন, ‘রুবি, সব ঠিকঠাক করে দে তো।’

তাঁর কণ্ঠস্বর ক্লান্ত। কালো ভ্রুর নিচে বেড়ালের মতো মিটমিটে চোখে একটা বক্রদৃষ্টি হেনে মুন্সি নিজেই লেগে যান কাজে। অতিথিদের প্রতি এতটুকু গালিফতির মানে অভদ্রতা।

খাওয়াতে প্রায় দশটা বেজে গেল। বাসনপত্র বারান্দায় জড়ো করে হঠাৎ বারেয়ার মনে হল তার ভীষন খিদে পেয়েছে। দৌড়ে ছুটে এল মায়ের কাছে। বলল, ‘আম্মা। অনেক রাত হয়ে গেছে।

মা বসে পান চিবাচ্ছিলেন। বললেন, ‘এখনি ওগুলো ধোয়ার দরকার নাই। ঘরের ভিতর এনে রেখে তোর আব্বাকে খেতে দে। এরপর তোর খাওয়া সেরে শুয়ে পড়গে। সারাদিন একটানা খাটুনি, কাঁচা শরীরে কত সয়।’

‘আপনি খাবেন না?’ কাপড়ের প্রান্তটা আঙুলে জড়াতে জড়াতে ও জিগগেস করল।

‘না।’

অধিক রাত্রে বিছানায় শুয়ে মুন্সি জিগগেস করলেন, ‘আজ ঈদ গেল। কাপড়টা পরা হয়নি কেন শুনি?’

আমেনা পাশ ফিরে চুপ হয়ে রইলেন। পড়তি বয়সেও তিনি যেভাবে মান-অভিমান করেন তা কোনো সদ্য তরুণীকেও লজ্জা দিতে পারে।

‘কথার জবাব দেওয়া হচ্ছে না কেন?’

‘না। আমি কিছু বলবো না।’ ডুকরে কেঁদে উঠলেন আমেনা। বললেন, ‘এই উৎসব আমার ভাল লাগছেনা।’

এ মনোভাবের উৎস কোথায় তা মুন্সির অজানা নয়। আর এখানে এসে তাঁর ব্যক্তিত্ব পাষাণের মত কঠোর হয়ে ওঠে, পিটপিটে চোখ দুটো জ্বলতে থাকে। ব্যাপারটা মনে করতেও দারুণ বিতৃষ্ণা। বড়ো দুটো ছেলে ছিল। দু’জনেই পড়তো কলেজে। এক ক্লাশ ওপর নিচে। কত কষ্ট করে, চার পাঁচ বাড়িতে কোরান শরিফ পড়িয়ে, সংসার খরচ অনেক কেটে ছেঁটে যে ওদের খরচ জোগান দিতেন, তা এক পরওয়ারদেগার ছাড়া কেউ জানেনা। অথচ শিক্ষিত হয়েও ওরা কতটুকু উপলব্ধি করল? কতটুকু মূল্য দিল এই ত্যাগের? না, কতগুলো বদমায়েশ ছেলের পাল্লায় পড়ে একটা গেল জেলে, আরেকটার কোনো পাত্তাই নেই। সব সময় বাড়িটার গোয়েন্দার প্রখর দৃষ্টি। এছাড়া মহল্লা-প্রধানদের উপদেশ, আর বক্রোক্তি তো আছেই। তাই ছেলেদের কথা ভেবে স্ত্রীর ঘ্যানর-ঘ্যানর তাঁর একটুকু সহ্য হয় না। একটু আভাষ পেলেই। গরগর করে ওঠেন।

‘একশ’বার বলেছি, ওদের ভাবনা ছাড়ো। যতসব কু-সন্তান পেটে ধরেছ। তোমার স্নেহের থোড়াই ধার ধারে ওরা। ওদের কথা বলতে শরম করে না?’

এর বিরুদ্ধে কোন পাল্টা অভিযোগ নেই। তবু একটি আকুতি ফেনিয়ে ফেনিয়ে ওঠে আমেনার মনে। বুকের পাঁজর যদি একটা একটা করে ভেঙে যেতে থাকে, তাহলে মানুষ কি করে বাঁচতে পারে? এর জবাব কোথায়? এই আকুলতা? এই অস্বস্তির? এর বিপক্ষে কোন্ অকাট্য যুক্তি দাঁড় করানো যায়? কোন্ সত্যভাষণের?

তাঁর ঠোঁটজোড়া আবেগে কাঁপতে থাকে। কথা নেই।

এমনিভাবে সময় কেটে যায়। আতঙ্ক নয়, কেমন একটা বিষণ্নতা তাঁর মূখে বাসা বাঁধে। যার প্রকাশ স্থৈর্যে। একাগ্র নীরবতায়।

রাবেয়া এসে বলল, ‘আম্মা। বাসন ধোয়া হয়েছে।’

‘ওগুলি কোঠার ভিতর সাজিয়ে রাখ্।’ আমেনা রান্নাঘরে চলে গেলেন, ব্যস্ততায়।

সে আসবে। যদিও নিজে একটু ছুঁয়েও দেখেননি, ঈদের আয়োজন থেকে অনেক কিছু তুলে রেখেছেন। কেউ জানেনা, মেয়েটি ছাড়া।

দেয়ালঘড়িটা সময়ের বুকে হাতুড়ি পিটে চলে, টক্ টক্ টক। অবিচ্ছিন্ন শব্দ দ্রুততাল হয়ে হারিয়ে যায় ভাবনার বিস্তীর্ণ ঝড়ে, সময় প্রায় হয়ে এল। কোনো আকস্মিক বাঁধা পথে নেকড়ের মতো। ওৎ পেতে থাকেনি তো? মায়ের বুক দুরুদুরু করতে থাকে।

খাবারগুলো রান্নাঘর থেকে তুলে এনে নির্জন কোঠায় রাখলেন সাজিয়ে। হারিকেনের চিমনী সাফ করেননি। জুলজুলে আলোয় কামরটা কোন অস্বাভাবিক ঘটনার নিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে। এক খিলি পান মুখে ঠেসে দিয়ে আমেনা বেরিয়ে এলেন উঠোনে। অন্ধকার বেশি না হলেও, পরিচিত লোকের মুখও না-চেনার পক্ষে যথেষ্ট। তিনি একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললেন।

আওতার বাইরের রাস্তায় চটিজুতোর আওয়াজ শুনে হকচকিয়ে উঠলেন একবার। মুন্সি গেছেন দাওয়াত খেতে। এ-সময় ফেরার কথা নয়। না, শব্দটা মিলিয়ে গেল।

কিছুক্ষণ বাদে একটা ছেলে প্রায় লাফিয়ে বারান্দায় উঠে ভেতরে গেল। কাছে গিয়ে আমেনা জিগগসে করলেন ফিসফিসিয়ে, ‘কি খবর?’

‘এসেছে!’ সে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল।

‘কই?’ আমেনা চঞ্চল হয়ে উঠলেন।

‘ওই, পেয়ারাতলায় দাঁড়িয়ে। বাসায় কেউ আছে নাকি?’

‘না।’ তিনি নিচু গলায় বললেন, ‘নিয়ে আয়। কেউ নাই।’

তার চোখ ফেটে পানি এল। বাসন ঠিক করতে কাঁপতে লাগলে আঙুলগুলো। লাল কেরোসিন ভরা হারিকেন। কালো ধোঁয়ায় ঢাকা পড়ে গেছে চিমনীটা। বড়ো অনুজ্জ্বল। বড়ো নিষ্প্রভ এই আলো। ঝাড় লন্ঠনটা বাড়িতেই আছে, তা জ্বাললে সমস্ত বাড়িটা ঝলমল করে উঠত। কিন্তু উপায় নেই।

দস্তরখানাটা পেতে দিলেন মাদুরের সামনের দিকে।

সে এল। আধো আলো, আধো ছায়ায় এসে দাঁড়াল। কোটের কলারটা ঘাড় অবধি খাড়া হয়ে উঠেছে খরগোসের কানের মতো। গলায় মাফলার জড়ানো। মাথায় টুপি। চওড়া কপালের নিচে চোখদুটো চকচক করছে। মুখে স্মিত হাসি। নাকের নীচের ঘন কালো গোঁফ পৌরুষকে সুস্পষ্ট করে তুলেছে। মায়ের মুখের দিকে কতক্ষণ তাকিয়ে রইল একদৃষ্টে। তারপর শান্ত গলয় বলল, ‘কেমন আছেন?’

আমেনার মুখের সূক্ষ্ণ রেখাগুলো চঞ্চল হল। কোনো কথা বের হলনা।ঝরঝর করে দু’চোখের পানি ছেড়ে দিলেন তিনি। আঁচলে তা মোছার চেষ্টাও না করে আবেগ-ভাঙা স্বরে উচ্চারণ করলেন, ‘ভাল। তুই কেমন!’

‘ভালই।’ সহাস্য মুখে আলি আকবর বলল, ‘কিন্তু আপনি কাঁদছেন যে! আমি এলাম, আমার জন্য আয়োজন করলেন- কই আনন্দিত হবেন, না এমন সময় কান্না! আপনার ছেলের মনখারাপ হয়ে যাবে বুঝতে পারছেন না?’

‘মা কেন কাঁদে তুই বুঝবি না।’ স্বরে অভিমানের সুর স্পষ্ট।

রাবেয়া কাছটিতে এসে দাঁড়িয়েছিল। ড্যাবড্যাবে চোখে সে বড় ভাইকে দেখছিল। মানুষ কিভাবে বাড়ি ছেড়ে থাকতে পারে তা ওর মাথায় ঢোকেনা। উনি বড়ো নিষ্ঠুর। এক ফোঁটা দয়ামায়া নেই। না হলে সবাইকে ফেলে কিনা লুকিয়ে লুকিয়ে বেড়ান!

তাকে দেখতে পেয়ে আকবর বলল, ‘এই যে রুবি। ছ’মাসেই অনেক বড় হয়ে গেছিস্। কই, খাবার টাবার দে। ভাইয়ের জন্য পোলাও কোর্মা খুব করেছিস, না রে?’

গলার স্বর নতুন ঠেকে কানে। জবাবে কি বলবে ভেবে পায়না সে। শুধু ঘাড় নাড়ে।

নানা ধরনের অনুভূতিতে আমেনার ভেতরটা তোলপাড় হচ্ছিল, হঠাৎ তিনি সচেতন হয়ে উঠলেন। মাথার কাপড় ঠিক করে দাঁড়িয়ে থাকা ছেলেটিকে বললেন, ‘যাও তো বাবা। উঠানের দোরের কাছে দাঁড়িয়ে থাকগে। কাউকে আসতে দেখলে দৌড়ে এসে খবর দিও কেমন?’

‘আচ্ছা।’

পাশের বাসার কেরানীর ছেলে শাজু। ভারী পাগলাটে। প্রবেশিকা উত্তীর্ণ হয়ে কেবল নিজের একগুঁয়েমিতে আর্ট ইস্কুলে ভর্তি হয়েছে। বাবেয়াকে সে ভয়ানক ভালবাসে। মায়ের বাক্স থেকে পয়সা চুরি করে চকলেট কিনে দেয়। তাকে মডেল করে ছবি আঁকতেও ছাড়েনা। সে বলে, ও হচ্ছে তার মোনালিসা। একে তো ছবি আঁকা কুফরী কাজ, তার ওপর মেয়েটার সঙ্গে অতিরিক্ত মাখামাখি, মুন্সি তাকে দু’চোখে দেখতে পারেন না।

আলাউদ্দিন আল আজাদের গল্প

আকবর বসল মাদুরে। সামনের বাসনে ভাপওড়া ভাত।

খেতে গিয়ে এমন এলোপাথারি গ্রাস তুলতে লাগল মুখে যে, মা চুপ হয়ে থাকতে পারলেন না। বললেন, ‘অমন করছিস কেন? ধীরে সুস্থে খা।’

‘আর কি আছে দিন।’ বাসনটা চেটেপুটে খেয়ে ও বলল।

মা শঙ্কিত হলেন। খাচ্ছে, এ সুখের কথা। কিন্তু এ ভাবে খাওয়াটা খুব ভালো নয়। এই মাথা নিচু করে, কোনো দিকে না চেয়ে গোগ্রাসে গেলা। তিনি জানেন, এভাবে যারা খায়, তারা বাঁচেনা বেশিদিন।

জিগগেস করলেন, ‘আরো তরকারি নিবি?’

‘নেব। আছে নাকি? অনেকদিন ঝাল খাই না।’

মা বিব্রত বোধ করলেন! বললেন, ‘আছে। তবে তিনদিন আগেকার। ওগুলি খাওয়া ঠিক হবে না। অসুখ-বিসুখ করতে পারে।’

মুখে বললেও তিনি সন্তুষ্ট হতে পারলেন না। রান্নাঘরেরে কড়াইয়ে মাছের তরকারি ছিল। ওর পাতে ভাত দিয়ে একটি বাটি পূর্ণ করে আনলেন। তার ওদিকে দৃকপাত নেই। সে কেবলি খাচ্ছে। খাচ্ছে কালাজ্বরের রোড়ীর মতো। ক্ষিপ্রগতিতে নড়ছে হাতের পাঁচ আঙুল। ঈষৎ হলদে হয়ে যাওয়া মুখটা আরো ভারী হয়ে উঠেছে। আমেনা ছেলের মুখের দিকে চেয়ে অবাক হয়ে রইলেন।

ছোট ছেলে আনু কোঁকাচ্ছে পাশের কোঠায়। তার জ্বর। সেদিকে কারো দৃকপাত নেই। দিনরাত পড়ে থাকে বিছানায় ভেজা সলতের মতো। বিড়বিড় করে। একটু চেতনা হলেই কাঁদে। ছ’মাস পর ভাইয়ের আগমেনর খবরটা রাবেয়া চেপে রাখতে পারল না। বাহাদুরি করে ওর কানে বলে দিল। কিছুক্ষণ পর চৌকাঠের কাছে একটা শব্দ হল। ধপাস করে। একটা কাতরানি।

‘আনু।’ মা আকুল হয়ে এগিয়ে গেলেন। তাকে কোলে তুলে নিয়ে এগিয়ে গেলেন, ‘এখানে কেন এলি বাবা। ইস্ মাথাটা কেটে গেছে।’

‘ভাইয়াকে দেখব আমি। ভাইয়াকে দেখব!’ আনু ভ্যাকভ্যাক করে কেঁদে উঠল। সেদিকে চেয়ে আকবরের মুখে কোন কথা জোগালো না। সে স্তব্ধ হয়ে রইল।

‘ঘরেবাইরে যতসব বদমাইসের রাজত্বি। এত করে বোঝালাম, ছেলেদের পড়িয়ে কাজ নেই। তা শুনলো আর কে? চুড়ি বেচ, মাদুলি বেচ- কি সোহাগ। চাকরি করবে, টাকা আনবে- কি সোহাগ! এখন হাটে ঘাটে বে-ইজ্জত হতে হয় আমাকে। অসহ্য!’

আপন মনে বকতে বকতে, সামনে দুয়ার বন্ধ দেখে, পেছন দিয়ে ঘরে ঢুকলেন আনিস মুন্সি। নেমন্তন্ন বাড়িতে খাওয়া হয়নি। মজলিশের আলোচনা গড়াতে গড়াতে তার ছেলেদের কথা ওঠে, আর ওদের নিয়ে বাঁকাচোরা কথার ঘা তার কলিজায় বড়ো বিঁধছে। তিনি স্থির থাকতে পারেন-নি। অনেকের অনুরোধ উপেক্ষা করে বেশ ঝাঁঝের সঙ্গেই চলে এসেছেন।

তাকে ঢুকতে দেখে শাজু প্রথমটায় চমকে উঠেছিল।

‘তুমি আবার কেহে?’ একটু নুয়ে ওর মুখ নিরীক্ষণ করে মুন্সি বললেন, ‘ও যা ভেবেছিলাম। তা রাত্তির বেলায় এখানে আসা হয়েছে কেন শুনি? মতলবখানা কি? একশ’বার না বলেছি, এ বাড়িতে পা দেবেনা?’

ও বুদ্ধি করে বললে, ‘মানে, আমি নয়। বাবা আপনাকে ডাকতে পাঠিয়েছিলেন, তার নাকি জরুরী কথা আছে?’

‘এখন যেতে পারব না।’ বলে তিনি গট্ গট্ করে এগিয়ে গেলেন।

ঘরের ভেতর টু শব্দটি নেই। প্রত্যেকেই নিজ নিজ কাজ করে যাচ্ছে, চুপচাপ। কেউ একটু নড়লনা। নড়ার চেষ্টাও করতে পারলনা। এমনি আকস্মিক। ‘তাহলে এই ব্যাপার! ঈদ করানো হচ্ছে! দাওয়াত খেতে যাওয়ার জন্যে কেন এত তাড়া এখন বুঝতে পারছি।’ নীলবে চেয়ে থেকে হঠাৎ মুন্সি ফেটে পড়লেন, ‘কিন্তু আর আমি সহ্য করবনা, আর না।’

সশব্দে ছড়িয়ে গেল বাসনপত্রগুলো। লাথির চোটে। একটা তস্তরি ভেঙে খানখান। ভাত তরকারী ফিরনি মিলে একাকার। ক্ষিপ্তের মতো তিনি চেঁচিয়ে উঠলেন, ‘একটা দানাও খেতে দেবনা যাও, এক্ষুনি বেরিয়ে যাও আমার বাড়ি থেকে। এই মুহূর্তে। না হলে ধরিয়ে দেব। যাও।’

আমেনা পাশেই দাঁড়িয়েছিলেন চুপ হয়ে। বাধা দিলেন না। কেঁদে উঠলেন না ডুকরে। ভাবলেশহীন দৃষ্টিতে চেয়ে রইলেন শুধু।

চিলমচির ওপর হাতমুখ ধুয়ে আকবর ধীরে সুস্থে হাত মুছল রুমালে। দাঁড়িয়ে কোটের কলারটা ঠিক করে বলল, ‘আচ্ছা মা আসি। অমন চুপ হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? কষ্ট হচ্ছে নাকি? কিন্তু আমি তো পেট ভরেই খেয়েছি।’

‘তুই আর আসিস না। তোর তোর জন্যে আর লোক পাঠাবনা।’ বিড়বিড় করলেন তিনি।

‘কেন আসব না? নিশ্চয় আসব। মাঝে মাঝে আপনাদের দেখতে আসব। অবশ্য যদি সময় পাই।

আমেনা হাঁপাতে হাঁপাতে বললেন, ‘না। আসিস্ না। আমি মরে যাই সেও ভালো। তবু এসব দেখতে পারব না!’

ফোঁপানোর মতো শব্দ করে তিনি চলে গেলেন কামড়া ছেড়ে। আকবর সে মুহূর্তেই বেরিয়ে যাবার জন্যে পা বাড়িয়েছিল। পারল না। আব্বা মেঝের দিকে চেয়ে দাঁড়িয়ে আছেন, একটা অঙ্গারের ফুলকি যেন মস্তিষ্কের কোষ থেকে ছিটকে উঠে নিভে গেছে। কপাল কোঁচকানো। চাপা ঠোঁটের কোণ থেকে ক্রোধের চিহ্ন একেবারে মিলিয়ে যায়নি। তবু সেখানে আর বিস্ফোরণের নির্দেশ নেই। কাঁধটা ঝাঁকানি দিয়ে চলতে শুরু করে আকবর বলল, ‘মাকে অনর্থক কষ্ট দেবেন না।’

মুন্সি জবাব দিলেন না কোনো। একবার মাত্র ছেলের মুখের দিকে আড়দৃষ্টে বুলিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলেন।

সে চলে গেল। এরপর নীরবতা। সমস্ত বাড়িটাকে কে যেন কথা-না বলার সংকল্পে মুড়ে দিল। অতল স্তব্ধতার বুকে হৃদপিণ্ডের উঠতি-পড়তির মতো কেবল দেয়াল-ঘড়িটার একটানা আওয়াজ। আবহাওয়া গুমোট। জানালার বাইরে আমগাছের একটি পাতাও নড়ছে না। লালচে বাতির শিখা স্থির হয়ে জ্বলছে। এখন ঘুমোবার সময় নয়, তবু রাবেয়া গায়ে পাতলা কাঁথা টেনে শুয়ে পড়েছে। চকলেট চিবোচ্ছে। ওর কিশোরী হৃদয়ের অজস্র মূক প্রশ্ন সমস্ত বাড়ির ঠাণ্ডা নীরবতাকে আরো ভারী করে তুলতে থাকে কুয়াশার মতো।

কোঁকানো বন্ধ হয়েছে আনুর। এমন জ্বর, উত্তাপে কপালটা এক্ষুণি ফেটে পড়বে যেন। স্পর্শ করে আমেনা শিউরে উঠলেন। আলোটা সিথানে তেপায়ায় রেখে ওর গায়ের লেপের সঙ্গে আরো একটা ভারী কাঁথা ভাঁজ করে দিলেন। আস্তে আস্তে। ও চোখ বুঁজে আছে। মুখটা দেখাচ্ছে বড়ো বিষণ্ণ।

কপালে পট্টি দেয়ার জন্যে একফালি শাদা কাপড় আর এক জগ পানি এনে রাখলেন টুলের ওপর। মুন্সি ছেলের শিয়রে এসে দাঁড়িয়েছেন, দেখতে পাননি।

‘অসুখ বেড়েছে নাকি?’ অনেকক্ষণ জবাব না পেয়ে ছেলের কপালে হাত রেখে অস্ফুট গলায় উচ্চারণ করলেন, ‘তাই তো দেখছি।’

কোনো প্রত্যুত্তর মিলল না।

‘ডাক্তার আমেদকে ডাকব? দিনের বেলা পথে একবার দেখা হয়েছিল। এখন বোধ হয় বাসাই আছেন। যাবো তার জন্যে?’

আমেনা নিশ্চপ। বড়ো এলুমিনিয়ামের তাগাড়ে পানি ঢেলে কাপড়ের টুকরোটা ভিজিয়ে নিলেন, তারপর তা দিয়ে লম্বালম্বি ঢেকে দিলেন ছেলের কপাল। ভেজা আঙুলে চোখের পাতাদুটো মুছে দিলেন। আলতোভাবে। এর আগে একশ’বার তাঁকে বলেছেন ডাক্তার ডাকতে। তিনি কানও দেননি। ওসব ওষুধের ওপর তাঁর একিন নেই। ওগুলোতে থাকে মদ মেশানো। নাপাক জিনিস। কিতাবের আয়াতে এক গেলাস পানি পড়ে দিলেই যে কোনো জটিল রোগ ভালো হয়। অবশ্য যদি পরমায়ু থাকে। ডাক্তার না ডাকার স্বপক্ষে তিনি এসব যুক্তিই দেখিয়েছেন বারবার।

‘কি মুখে তালা লেগেছে নাকি? রা বেরুচ্ছে না কেন?’ মুন্সি দাঁত খিঁচিয়ে উঠলেন। বলতে লাগলেন, ‘মরুক। মরুক গে। এটাকেও আর বাঁচিয়ে লাভ নেই। একটা গেছে জেলে, আরেকটা ফেরারী, আর এটাও বড় হয়ে কি হয় কে জানে? চোর না ডাকাত, না বদমায়েশ! মরুক, এক্ষণি মরে যাক।’

তিনি দাঁড়িয়ে রইলেন বারান্দায় এসে। নিজের কথাগুলো তাঁর নিজের কানেই বাজছে। একেকবার ঝাপটা দিয়ে দিয়ে। এমনি তীক্ষ্ণ তাঁর গলা। ভেতরের সমস্ত জ্বালাকে একবারে রূপ দিতে কণ্ঠস্বর আশ্চর্য সক্ষম। মাথাটা টন্ টন্ করছে, ছেলেটার মুখ এমন বিবর্ণ হয়ে গেল হঠাৎ? ঈদের দু’তিনদিন আগেকার একটি ছোট ঘটনা মনে পড়ল তার। তখন জ্বর বেশি ছিল না। সাঙ্গপাঙ্গদের সঙ্গে হৈচৈ করছিল ওঠোনে। গোলমালে তাঁর মাথা চড়ে গেল। সকাল বেলার কোরান-তেলাওয়াতটাও ঠিকমতো করতে দিল না? আনু হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ছিল, বাবার উপস্থিতিতে তার অন্তরাত্মা শুকিয়ে গেল। একটি গম্ভীর ডাক। এক পা দু’পা করে কাছে যেতেই বাপ তার কানে ধরে হেঁচড়ে তুললেন বারান্দার ওপর। তারপরে গায়ের সমস্ত জোরে এমন এক বে-হিসেবী থাপ্পড় মারলেন যে, অজ্ঞান হয়ে পড়ে গেল ছেলেটা। চোখ উলটিয়ে দিল।

‘তুমি মানুষ না আর কিছু?’ আমেনা ক্ষুব্ধকণ্ঠে বললেন, ‘দুধের বাচ্চাটার গায়ে হাত তুলতে একটু বাধলো না।’

‘না। আমি জল্লাদ।’ মুন্সি তিরিক্ষি গলায় বললেন, ‘আমি তিন মাসে একটা হাসি দেইনা, আর ও এতো হাসবে নে? এতো হাসির খোরাক কোত্থেকে আসে?’

সেদিন থেকে আনুর জ্বর যে বেড়েছে আর কমেনি।

আলাউদ্দিন আল আজাদের গল্প

ঘটনাটা ছোট হলেও নতুন করে পীড়া দিতে লাগল। কপালের দু’পাশের রগদুটো ছট্ ছট্ করছে।মস্তিষ্কে কে যেন একটা একটা করে আলপিন ঢুকিয়ে দিচ্ছে। কই, আগে তো এরকম কিছু হয়নি। এমন দুর্বলতা। এমন অনুশোচনা। এসেছিল ছ’মাস পর, ছেলেটা ভাল করে খেতেও পাল না। ভূত-গ্রস্তের মতো এদিক ওদিক হাঁটতে হাঁটতে মুন্সি আবার আনুর শিয়রে এসে দাঁড়ালেন, ওর জ্বরতপ্ত মলিন মুখটার দিকে চেয়ে রইলেন ঝাপসা দৃষ্টি দিয়ে।

কতক্ষণ কেটে গেল বলতে পারবেন না। ছেলেটা একবার করুণভাবে কঁকিয়ে উঠতেই আর স্থির থাকতে পারলেন না ক্ষণেকের জন্যেও। ঘর থেকে বেরিয়ে এসে রাস্তায় নামলেন। রাত তো খুব বেশী হয়নি। ডাক্তার আমেদকে এখন পাওয়া যাবে না?

অন্যমনস্কভাবে চলতে চলতে পথ ভুল করে এসে পড়লেন মসজিদ গেটের কাছে। একদল মুসল্লি দাঁড়িয়েছিল। তাকে দেখতে পেয়ে কাছে এসে বললেন, ‘এই যে, আপনার জন্যেই যাচ্ছিলাম। অনেক রাত হয়ে গেল। নামাজ পড়াবেন না? সবাই বসে আছে।’

‘ও হাঁ। খুব দেরী হয়ে গেল।’ মুন্সি বিড়বিড় করে বললেন, ‘আমার একটা কাজ ছিল। জরুরী কাজ।’

অজুহাত দেয়ার প্রয়োজন ছিল না। তাঁর কথাগুলো সেরকমই শোনাল। তাড়াতাড়ি পাঞ্জাবীর হাতা গুটিয়ে হাউজের পাকায় বসে অজু করতে লাগলেন। দিনে পাঁচবার অভ্যাস, সাধারণ ভুলও হবার কথা নয়। কিন্তু এ সময় এলোমেলো হয়ে গেলো সব। হাত ধোয়ার আগেই ধুয়ে ফেললেন মুখ। ছের মোছার আগে পা। সেখানে লক্ষ্য করার কেউ ছিল না।

চটিজোড়াটা সিঁড়ির নিচে রেখে মিনারের ওপরে ওঠলেন। মাথার ভেতরটা ভোঁ ভোঁ করছে। তা আজান দিতে হবে।

ওপর থেকে দেখা যায়, অসংখ্য জানালার আলো। ল্যাম্পপোস্টের ক্লান্ত চাউনী। আবছা অন্ধকারে স্থির হয়ে আছে ছাদের আয়তন। আর তারও ওপরে আসমান। তারায় তারায় ভরা। গোলাকার তাঁবুর ছাউনীকে বেঁধে দেয়া হয়েছে ছায়াপথের ফিতেয়। ওপরে ছাদ নেই। সানের মিম্বরে দাঁড়িয়ে মুন্সির কণ্ঠস্বর অনেক দূরে মিলিয়ে গেল, ‘আল্লা-হু-আক্-ব-র।’

আজানের সময় এমন মিষ্টি গলা আর কারো হয় না। এ জন্যে তিনি প্রসিদ্ধ। অনেকে তাঁকে বেলালের সঙ্গে তুলনা করতেও ছাড়ে না। কিন্তু আজকে কেমন যেন গোলমাল হয়ে গেছে। সে তীক্ষ্ণতা, সে তেজ নেই গলায়। স্বরটা কেমন যেন গরগরে। ভেঙে ভেঙে যাচ্ছে।

মাঝামাঝি এসে স্বর আর বেরুতেই চাইল না। ডানপাশ ফিরে ডাকলেন, ‘হাই আলাস্ সালাহ্…।’

কিন্তু বাঁ পাশে ফিরতে পারলেন না। ছাদগুলি হুড়মুড় করে নড়ে ওঠছে। এরপর দুলে দুলে তরঙ্গ হয়ে যাচ্ছে। তারই একটা প্রচন্ড প্রবাহ এগিয়ে আসছে যেন। গোঙানীর মত একটা শব্দ করে তিনি পড়ে গেলেন।

‘কি হল।’ মুসল্লিদের কয়েকজন হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলো।

তারা টেনে তুললেন তাঁকে। ঘাড়ে শক্তি নেই। মাথাটা ঝুলে পড়েছে। অস্ফুট যাতনায় তিনি অতিকষ্টে বললেন, ‘মিনারটা দুলছে। আমাকে নিচে নিয়ে চল। নিচে।’

মুসল্লিরা পরস্পর মুখ চাওয়া-চাওয়ি করলেন। কিছুই বুঝতে পারলেন না। দু’পাশে দু’জন তাঁকে আগলে ধরে সাবধানে মাটিতে নামলেন সিঁড়ি বেয়ে। পা হেঁচড়াতে হেঁচড়াতে কোনমতে এসে মুন্সি ধপাস করে পড়ে গেলেন বিছানায়। তাঁর মনে হল, সমস্ত বাড়িটাই দুলছে।

আরও পড়ুন-  রফিকুজ্জামান রণির গল্প- প্রতারণা

Mostafizur Rahman
Mostafizur Rahman

Mostafizur Rahman is a professional content writer at CrawlText, specializing in SEO articles, blog posts, and web copy that drive engagement and conversions. With experience crafting clear, audience-focused content for almost all the niches, he delivers well-researched, optimized pieces on deadline. He combines editorial rigor with keyword strategy to boost traffic, authority, and reader retention across blogs, platforms, and newsletters.

Scroll to Top