ক্রসফায়ার- আনোয়ার রশীদ সাগরের গল্প

Mostafizur Rahman
Mostafizur Rahman

Mostafizur Rahman is a professional content writer at CrawlText, specializing in SEO articles, blog posts, and web copy that drive engagement and conversions. With experience crafting clear, audience-focused content for almost all the niches, he delivers well-researched, optimized pieces on deadline. He combines editorial rigor with keyword strategy to boost traffic, authority, and reader retention across blogs, platforms, and newsletters.

যশোর রেল ষ্টেশন। অন্ধকার রাত। আলোর তীব্রতা নেই, থাকলেও কুয়াশার কারণে তা ক্ষীণ হয়ে গেছে। সব কিছু আবছা আবছা লাগছে। ষ্টেশনের পশ্চিম কোণায় বসে আমি বিড়ি টানছি। বেশ কয়েক জন দরিদ্র মানুষ কাজ শেষে বাড়ি ফেরার অপেক্ষায় ষ্টেশনেই বসে আছে। ওদের কারো হাতে কোঁদাল, কারো কাছে ঝুঁড়ি ও কারো কাছে নিড়ান রয়েছে। শীতের তীব্রতা বেড়েই চলেছে। খেঁজুর গুঁড়ের গন্ধ ভেসে আসছে। ষ্টেশনের পূর্ব কোণায় গুঁড়ের ভাঁড় বা ঠিলি সারি সারি সাজিয়ে রেখেছে গুড় বিক্রেতারা। যদিও ট্রেন এখনো আসেনি তবুও গুড়ের ঠিলিগুলো বিভিন্ন বগিতে তোলার জন্য এবং বিভিন্ন দিকে নিয়ে যাওয়ার জন্য তাড়াহুড়ো শুরু করে দিয়েছে লোকগুলো। এমন সময় একদল পুলিশ আমার পাশ ঘেঁষে হেঁটে চলে যায়। আমার গা ভয়ে ছমছম করে উঠলো। ষ্টেশনের পূর্ব আকাশে চাঁদটা ধাইধাই করে উপরের দিকে উঠে আসছে। ষ্পষ্ট দেখা যাচ্ছে ঘোলা আকাশে জোছনার বিচ্ছূরণ।

স্টেশনের বইয়ের দোকানের পশ্চিম পাশে আরো একটি চা এর দোকান রয়েছে। সেখানে পুলিশের আর  একটি বৃহৎ দল হেঁটে আসতে আসতে দাঁড়িয়ে যায়।

আমি হাতের বিড়িটা ফেলে দিলাম।  ভয়ে ভয়ে ধীর পায়ে আরো  কয়েক পা পশ্চিমের দিকে  এগিয়ে যায়। এর পর পাশে থাকা শ্রমজীবি মানুষগুলোর মধ্যে বসে পড়ি।  বসতে বসতেই

পঁ-অ-অ করে দু’বার ট্রেন আসার শব্দ হল। খুলনা থেকে লুকাল ট্রেন আসছে। রাজশাহীর দিকে যাবে। ট্রেনটিকে কেউ মহানন্দা বলছে আবার কেউ লুকাল ট্রেনও বলছে। ট্রেন থামার সাথে সাথে শ্রমজীবি মানুষগুলো উঠে দাঁড়িয়ে পড়ে। এ ট্রেনেই তারা উত্তর অঞ্চলে যাবে। দু’ এক জনের সাথে আলাপ করে জানতে পারি, অনেকদিন হয়ে গেছে তারা বাড়ি থেকে এসেছে, দক্ষিণ অঞ্চলে কাজের খোঁজে এসেছিল। উল্লেখ করার মত কাজ তারা পায়নি,ছোট খাটো যে কাজ পেয়েছিল সে কাজ শেষে পরিবার পরিজনের কাছে ফিরে যাচ্ছে। তাদের বাড়ি ঈশ্বরদীর ঝোড়পাড়া গ্রামে।

বছর দশেক আগে কমরেডদের সমাবেশে যোগ দিয়ে ছিলাম,এই এলাকায়। দরিদ্র পীড়িত এলাকা। মাটির রাস্তা দিয়ে নয়-দশ কিলোমিটার পথ হেঁটে গিয়েছিলাম। গ্রামশূন্য রাস্তা দিয়ে রাতের আঁধারে হেঁটে যেতে যেতে বিশাল বড় এক বাঁশ বাগানের মধ্যে পৌঁছিয়ে চুমকিয়ে উঠেছিলাম। হঠাৎ টর্চ লাইটের আলোয় এলাকাটা আলোকিত হয়ে উঠেছিল। কিন্তু টর্চ লাইটগুলো সব পায়ের দিকে বা নিচের দিকে ধরে রেখেছিল উপস্থিত কমরেডরা। পা’র দিকে চোখ পড়ার সাথে সাথে মনে হচ্ছিল হাজার হাজার পায়ের পাতা সারি সারি সাজিয়ে রাখা হয়েছে।

আসলে কারো মুখ দেখা যাচ্ছিল না।কিছুক্ষনের মধ্যেই টর্চ লাইটগুলো একটা বট বৃক্ষের দিকে জলে উঠেছিল। সবই পরিকল্পিত ভাবে করা হয়েছিল, যেন আমাদের মত নতুন যোগদানকারীরা চমকগুলো দেখে মুগ্ধ হয়ে যায়। সেই বট বৃক্ষের নিচে সমাবেশ হয়েছিল। আশির দশকের শেষের দিককার ঘটনা ছিল এটি। সেখানে সাতটি দেশের সাতদলের বড় বড় কমরেডরা বক্তব্য রেখেছিল।-

“শোষণহীন সমাজ গড়তে হবে।- এ সমাজ ভাঙতে হবে।”

এধরণের শ্লোগান এবং প্রত্যয় ব্যক্ত করে সমাবেশ শেষ হয়েছিল।

বদলে গেছে দিন। অনেক সময় চলে গেছে। যারা ‘রুশ-ভারতের দালালরা হুসিয়ার সাবধান’ বলে শ্লোগান দিতো তারা এখন স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি হয়ে গেছে বা সেজেছে।

অথচ আমাদের মত হাজারো তরুণ তাদের ডাকে সাড়া দিয়ে জীবন দিয়েছে, মানুষ হত্যা করেছে। আমরা এখনো পালিয়ে বেড়াচ্ছি, আমাদের নেতারা ক্ষমতার স্বাদ পেয়ে ভুলে গেছে সব। এই নেতারাই স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বলেছিল ‘ দুই কুকুরের লড়াই’। এই নেতারাই এখন স্বাধীনতার পক্ষের শক্তি আর বঙ্গবন্ধর নাম নিতে নিতে মুখে ফেনা তুলে ফেলছে।

আমি শেষে যে দলে এলাম সেই দলের নেতারা ক্ষমতায় অংশগ্রহনকারী নেতাদের সংশোধনবাদী এবং সাম্রাজযবাদের দালাল হিসেবে চিহ্নিত করেছে।

ট্রেন ঈশ্বরদী স্টেশনে এসে পৌঁছাল। আমি এখানে নেমে পড়ি। পুলিশ তাদের ডিউটিতে ট্রেনেই ছিল। আমি ঐ  শ্রমিকদের সাথে হাঁটা শুরু করেছিলাম, বেশ কিছদূর যাওয়ার পর স্বস্থি পেলাম। চারিদিকে ভীষণ অন্ধকার। তবে রাস্তা চিনতে অসুবিধা হয়নি। চলে আসলাম সেই ঝোড়পাড়ার দিকে।

 

।।২।।

অনেক বছর পর ঝোড়পাড়া মকছেদ চাচার বাড়ি আশ্রয় নিলাম। এরপর নতুন জীবনের শুরু করলাম।

ফুলি মানে ফুলবানু বর্তমানে আমার হতভাগ্য বউ। যখন এই এলাকায় আন্ডার গ্রাউন্ড ছিলাম তখন আমি জোর করে ফুলবানুকে বিছানায় নিয়েছিলাম। রেপ করেছিলাম। সেদিন আমি ফুলবানুদের বাড়িতে শেল্টার ছিলাম। এখন বুঝি আমারই অন্যায় হয়েছিল। অবশ্য পার্টির সিদ্ধান্তে,

পরে ফুলিকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছিলাম।

গতরাতে চুপি চুপি এসে ফুলির ঘরে শুয়ে পড়েছিলাম। সকালটা শীতের। ক্লান্ত ছিল শরীর। ঘুম ভেঙে গেলে দেখি, সূর্যটা মৃদুমিষ্টি শীতের আমেজকে আলতো করে তুলে, নিভুনিভু কুয়াশাভরা রোদ ছড়িয়ে দিয়েছে।

উঠানের উত্তর দিকে পুঁই শাকের বান,ফুলি ঐ বানের নিচে হাঁস-মূরগীকে বাসিপান্তা খাবার ছিটিয়ে দিয়েছে। হাঁসমুরগী গুলো হৈচৈ করে বা ঠেলাঠেলি করে খাচ্ছে। একটু দূরে এপাড়ার ছেলেমেয়েরা হুড়ো বা খড়কাঠি ও শুকনো পাতা দিয়ে আগুন জেলে হাতপা আগুনের উপর ছড়িয়ে   শরীর তাপাচ্ছে। কেউ কেউ মাঝে মাঝে খড়ি বা কাঠি দিয়ে আগুনের নিচের ছাই নেড়ে দিচ্ছে। যাতে আগুনের তাপটা বেশি হয়।

আন্ডার গ্রাউন্ড পার্টি বা শ্রেণি সংগ্রাম করতে গিয়ে সংসার করা হয়নি। বউটি ভাল বলে আমার বউ রয়েছে। তা না হলে অনেক আগেই আমাকে তালাক দিয়ে অন্য কাউকে বিয়ে করতো।  কারণ এই ফুলি রক্ষীবাহিনী এবং গণবাহিনীর কঠিন অত্যাচার ও শারীরিক নির্যাতন সহ্য করে টিকে  আছে। এরপরও দুটি সামরিক শাসক জিয়া-এরশাদ এর বাহিনী কম নির্যাতন করেনি। প্রায় বার/তের বছর পর আমি এবাড়িতে আসলাম। বউটি আমার থাকার দুটি কারণ মনে হয়েছে, প্রথম কারণ, ফুলি হয়তো আমাকে খুব বেশি ভালবাসে এবং দ্বিতীয় কারণ, আমার কাছে অস্ত্র রয়েছে সে ভয়ে ‘আমার বউ’ আমারই রয়েছে,কেউ তাকে বিয়ে করতে সাহস করেনি।

স্বামী হিসেবে আমার তেমন কোন যোগ্যতা নেই। না পারি খেতে দিতে, না পারি কাছে থাকতে।

এখন আমার বয়স ৫০/৫২ হবে। যখন নবম শ্রেণিতে পড়তাম তখন এক শিক্ষকের কাছে বীজগণিত করতে যেতাম। আমার সাথে ঐ স্যারের কাছে আরো ৫/৬ জন সহপাঠি পড়তে যেতো।

 

।।৩।।

আমাদের বিদ্যালয়ে গণিত করানোর মত শিক্ষক ছিল না। একদিন আমার এক সহপাটি রাজিব বলল, আমাদের বাড়ি একজন স্যার আছে, খুব ভাল বীজগণিত বোঝাতে পারে। আমার কৌতুহল বেড়ে যায়। অংক শিখব। একদিন সকালে যায়  ওদের বাড়ি।

সঙ্গে নিলাম বীজগণিত বই আর একটা খাতা। স্যার আমাকে দেখে খুব আদর করেছিল। নাম জিজ্ঞাসা করলে বলেছিলাম ‘নুরুজ্জামান’ ।

স্যার বলেছিল.আরে অতবড় নাম দরকার নেই, এখন থেকে তুমি ‘নুরু’। গুডবয় ,বলে স্যার মিষ্টি করে হেসেছিল।

স্যারের নাম মাসুম। আমরা বিভিন্ন জায়গায়  মাসুম স্যার বলে পরিচয় দিতাম। আসলে স্যার খুব ভাল বীজগণিত করাতেন। ক্লাসের মধ্যে অংকে ভাল হয়ে যায়। বাবা-মাও খুব খুশি হয়। মাঝে মাঝে স্যারকে দাওয়াত দিয়ে মা খেতে দিত। বছর চলে গেলে আমি দশম শ্রেণিতে উঠে পড়ি।

এর মধ্যে ধীরে ধীরে কবে যে অসম্প্রদায়িক এবং কমিউনিজম রাজনীতিতে বিশ্বাসী হয়ে উঠেছি তা বলতে পারব না। তবে একদিন ভোরবেলা আমাদের বাড়ি থেকে দেড়/দুই কিলোমিটার দূরে শুধুই গুলির শব্দ হতে লাগল।  ঐ দিন বিকেলে শুনলাম মাসুম স্যার মারা গেছে,পুলিশের সাথে ফাইট করতে গিয়ে। পরের দিন থেকেই আমরা যারা স্যারের কাছে পড়তাম  তারা সবাই বাবা এবং আত্মীয়দের চাপে পালিয়ে গেলাম। হয়ে গেলাম আন্ডারওয়ার্ল্ডের কমিউনিষ্ট কর্মী। আমরা তখন হকগ্রুপের বিশাল তরুণ বাহিনী। শ্রেণি সংগ্রামে বিশ্বাসী বিপ্লবী কমিউনিষ্ট পার্টির সংগ্রামী নেতা বা কমরেড হয়ে উঠলাম। হুলিয়া নিয়ে ঘুরছি।

তবে  সে সময় এখনকার মত পুলিশ বা র‌্যাব এর সংখ্যা এত বেশি ছিল না। যে কারণে সব জায়গায় আমাদের আধিপত্য ছিল। এরশাদের পতনের পর বিএনপি সরকার র‌্যাব ও যৌথবাহিনী সৃষ্টি করে যখন বিচারবিহীন  হত্যা শুরু করে তখন আমাদের জাদরেল জাদরেল নেতারা হারিয়ে যেতে থাকে। সেই ধারা অব্যাহত  রাখে আওয়ামীলীগ সরকারও।

বর্তমানে ক্রসফায়ারের ভয় তে নিষিদ্ধ ঘোষিত বামপন্থীদল গুলো কোণঠাসা হয়ে পড়েছে। আমি এখন নুরু হুজুর। খুলনা ছেড়ে ঝোড়পাড়ায় ,কতক্ষণ বেঁচে থাকব বলতে  পারব না।

।।৪।।

 

ঝোড়পাড়া এলাকায় বেশ কিছুদিন বসবাস করছি। এক মুরুব্বীর কাছে জেনেছিলাম ছাতারপাড়া  গ্রামে রুশপন্থী কমিউনিষ্ট নেতা জসীম মন্ডলের বাড়ি। এই গ্রামে বৃটিশ আমলে জোতিবসুদের মত নেতারা বৈঠক করে গেছে।

কিন্তু চারুমজুমদারের অনুসারীরা এলাকায় এত আধিপত্য বিস্তার করেছে যে, ভিন্নমতের কমিউনিষ্টদের অথবা পুলিশের সাথে সংশ্লিষ্ট  কা্‌উকে  পেলেই রাস্তার ধারে অথবা জনসম্মুখে জবাই করে। এরই মধ্যে পাশের গ্রামের এক পরিবারের সাত জনকে ওরা জবাই করে হত্যা করে। আমি বেশ আতঙ্কিত হয়ে পড়ি।

পুলিশ-যৌথবাহিনী তো হানা দিবেই। কৌশলে  এলাকা ছাড়ি। এইভাবে, এলাকা ছাড়ায় আমার জীবণের কাল হয়ে দাঁড়াই। পুলিশের ধারণা এই মার্ডারের সাথে আমি নিশ্চিত জড়িত ছিলাম। পালানোর সময় আমার ফুলবানুর পেটে আমার ঔরসজাত সন্তান ছিল।  জানিনা ফুলবানু এখন কেমন আছে.কেমন আছে আমার শ্বশুড় মকছেদ আলী? আন্ডারওয়াল্ড থেকে স্বাভাবিক জীবণে এসে বেশ আরাম প্রিয় হয়ে উঠেছিলাম। কিন্তু আবার সেই অস্থির এবং সংগ্রামী জীবণে চলে আসতেই হল। অস্ত্র বাম হাতে নিয়ে খেতে বসি ,যেন ডান হাতকে বিশ্বাস করতে পারি না। ভেঙে যাচ্ছে আত্ম বিশ্বাস। যাদের সাথে মিশি ,তারা কেউ  কাউকে বিশ্বাস করে না।

ধীরে ধীরে ব্যক্তি স্বার্থ  এবং  নারী লোভী কর্মী দলে বাড়ছে। আগের মত ত্যাগী কর্মী দলে নেই বললেই চলে। গ্যাঙগ্রুপ আর ডাকাত গ্রুপ নামে কমিউনিষ্টরা পরিচিত হয়ে যাচ্ছে। মৌলবাদের উল্থান হচ্ছে। ওরাও প্রচার দিচ্ছে কমিউনিষ্টরা নাস্তিক।  বিভিন্ন কারণে জনসমর্থন হারাতে বসেছি আমরা।

 

এদিকে পুলিশ যৌথবাহিনী আমাকে হন্যি হয়ে খুঁজছে। যারা মার্ডার করেছে তারা তো সু-শৃঙ্খল বাহিনী। ভারত-বাংলাদেশ মিলে  তাদের সংগঠন বিস্তৃত। দক্ষিণ-পশ্চিম অঞ্চলে তাদের একছত্র আধিপত্য।

শুধু আমরা  বিপদজনক অবস্থানে আছি। একদিকে পূর্ববাঙলার কমিউনিষ্ট পাটির টার্গেটে অপরদিকে রাষ্ট্র নিয়ন্ত্রিত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর টার্গেটে । বুঝতে পারছি বাঁচার পথ হারিয়ে ফেলছি।

 

।। ৫।।

দিনের পর দিন আমাদের দল এবং দলের শক্তি দূর্বল হয়ে পড়ছে। এর মধ্যে প্রফেসর লুৎফর রহমান এবং টিপু বিশ্বাস সহ বেশ কিছু নেতা দল ছেড়ে চলে যায়। তারা ইউনাইটেড কমিউনিষ্টলীগ নামে দল গঠন করে।মেহেরপুরের আম বাগান দখল নিয়ে  মাঠ পর্যায়ে কর্মীদের প্রতিপক্ষরা হত্যা করছে। কয়েক বছরে শত শত কর্মী হত্যা হয়ে যায়। হত্যার শিকার হয়, জাসদ নেতা মারফত আলী, আড়পাড়ার সেভেন মার্ডার হল, কাজী আরীফ সহ পাঁচজন দিনে দূপুরে হত্যা হয়। লাশের রাজত্বে আমাদের বসবাস যেন।

যাহোক, স্বাভাবিক জীবণের আশায় দল থেকেও পালিয়ে যায়। তাবলীগ জামাতের সাথে মিশে গেলাম। চিল্লার সাথে থাকা শুরু করলাম। বেশির ভাগ সময় মেহেরপুরের সীমান্ত এলাকায় থাকতাম,বিপদ বুঝলে ভারতে পালিয়ে যেতে পারি, এমন দূরত্ব বজায় রেখে চলি। আলমডাঙ্গা উপজেলার খাসকররা গ্রামের মসজিদে কয়েকদিন থাকার সুযোগ হয়।

এখানেও সর্বহারা পার্টির দখল আর মফিজগ্রুপের দখলের লড়াই চলছে। এরই মধ্যে ষোলজনকে প্রতিপক্ষ হত্যা করে মাটি চাপা দেওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়ে। আমি এলাকা ছেড়ে ঢাকার কাকরাইল মসজিদে থাকা শুরু করি। পত্রিকা পড়ে এলাকার খবর পড়ে গা শিউরিয়ে ওঠে। খুলনার এরশাদ শিকদারের খবর প্রতিদিন পেপারে পড়ি। খবর পড়ি, সরকারী আইনশৃংখলা বাহিনীর সহযোগিতায় বাংলার কমিউনিষ্ট পার্টির সৃষ্টি  হয়েছে। কিছুদিন পরই শুনি স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উদ্যোগে লাল্টু গ্রুপ আর সিরাজ গ্রুপ স্যারেন্ডার করছে। সারাক্ষণ খবর নিয়ে ব্যস্ত থাকি, কখন কী ঘটে যায়। জীবণের ভয়ে এতকিছু করে বেড়াচ্ছি। হঠাৎ পেপারে দেখি ফুলবানু আর মকছেদ চাচা জাতীয় প্রেসক্লাবে সাংবাদিক সম্মেলন করেছে। ফুলবানুর দাবী তার স্বামী অর্থাৎ আমি গুম হয়ে গেছি। ছবিতে মকছেদ চাচার পাশে এলাকার মুক্তিযোদ্ধারা রয়েছে ,তবে আমার ফুলবানুকে বেশ মরা মরা লাগছে, ওর পেটে সন্তান রয়েছে সে কথা সংবাদ সম্মেলনে উল্লেখ করেছে-খুব ইচ্ছে হচ্ছিল ফুলবানুকে দেখতে,কিন্তু দেখব কি করে? দূভার্গ্য নিয়ে জন্মিয়েছি মনে হচ্ছে।

তবে সংবাদ সম্মেলন শেষ না হতেই আমার ফুলবানুকে এবং তার বাবা মকছেদ চাচাকে আইন শৃঙখলা বাহিনী তুলে নিয়ে গেছে। যে কারণে মানবাধিকারের চেয়ারম্যানও  গদবাঁধা বক্তব্য দিয়েছে। আমি পেপার পড়ে ভাবছিলাম আমার দুবার মৃত্যু হল।এদিকে এলাকার জাঁদরেল জাঁদরেল কমিউনিষ্ট নেতারা ক্রসফায়ারে হত্যা হচ্ছে,মধুবাবু বা আব্দুল গাফ্ফার চৌধুরী, কমরেড তপন, ডা:টুটুল প্রমুখদের মেরে ফেলেছে।

ভয়ে ভয়ে প্রেসক্লাবের পাশে যায়,মাথায় পাগড়ী বেঁধেছি, মুখ ভর্তি দাড়ি রয়েছে আমার।

কিন্তু প্রেসক্লাবে অগ্নিঝরা বক্তব্য চলছে,বক্তারা চেগুয়েভারকে নিয়ে  বিপ্লবী বক্তব্য রাখছে।মাওসেতুঙ,কার্লমার্কস এবং এঙ্গেলসকে নিয়ে তাদের দুনিয়া জুড়ে সাফল্যের কথা বলতেছে। অথচ বলতেছে না ডা: টুটুলের কথা অথবা যেসব বিপ্লবীদের প্রতিদিন ক্রসফায়ারে হত্যা করা হচ্ছে, তাদের কথা কেউ বলছে না। দ্বিমুখী এই বুদ্ধিজীবি কারা আমি ঠিক চিনি না। আমার ফুলবানুকে আর তার বাবাকে  প্রেসক্লাব থেকে তুলে নিয়ে কোথায় গেল, জানার অধিকার নেই আমার অথচ কী হচ্ছে এসব,নাটক ?

রাস্তার পাশে বসে হুঁহুঁ করে কাঁদলাম। মরতে যখন হবেই লড়াই করে মরাই ভাল।-আমি আবার ফিরে আসি এলাকায় ,হারিয়ে যাই হাজারো বিপ্লবীদের মাঝে…।

 

আরও পড়ুন- রুশিয়া জামান রত্নার গল্প

Mostafizur Rahman
Mostafizur Rahman

Mostafizur Rahman is a professional content writer at CrawlText, specializing in SEO articles, blog posts, and web copy that drive engagement and conversions. With experience crafting clear, audience-focused content for almost all the niches, he delivers well-researched, optimized pieces on deadline. He combines editorial rigor with keyword strategy to boost traffic, authority, and reader retention across blogs, platforms, and newsletters.

Scroll to Top