Mostafizur Rahman is a professional content writer at CrawlText, specializing in SEO articles, blog posts, and web copy that drive engagement and conversions. With experience crafting clear, audience-focused content for almost all the niches, he delivers well-researched, optimized pieces on deadline. He combines editorial rigor with keyword strategy to boost traffic, authority, and reader retention across blogs, platforms, and newsletters.
কবিতা কী? এ বড়ো জটিল প্রশ্ন, উত্তর যার কোনোকালেই স্থিরতা পায়নি। আপাত ভাবনায় মনে হয়- ‘কবিতার সংজ্ঞা, এ আর এমন কী!’ অথচ পরক্ষণেই ভাবনার দোলাচলে অনুধাবন করা যায়- এ প্রশ্নটি অনেকটা ভরা মজলিশে ‘আপনার নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন’ ধাঁচের প্রস্তাবনার বিপরীতে কিছু বলতে যাওয়ার মতোই দুঃসাধ্য ব্যাপার। মহাজ্ঞানী সক্রেটিস এর ‘নো দাইসেলফ’, মাত্র দুটি শব্দের একটি অনবদ্য মহাকাব্য। কবিতাও অনেকটা তাই।
যদিও বোদ্ধাজন কবিতাকে নানাবিধ সংজ্ঞায় সংজ্ঞায়ন করার চেষ্টা করে থাকেন, তবু কবিতা সব সময়ই নৈর্ব্যক্তিক থেকেছে এবং থাকবে। সাহিত্যের প্রায় সব শাখাকেই সুনির্দিষ্ট ছকে বা সংজ্ঞায় ফেলা হয়েছে সময়ে সময়ে। কিন্তু কবিতা! আহা…, এ হলো এক লাগামছেঁড়া পাগলা ঘোড়া, পাড়ভাঙা স্রোতস্বিনী নদী, রহস্যময়ী অচেনা নারী, এক আকাশ রোদপোড়া তপ্ত যন্ত্রণা কিংবা একবুক অস্পৃশ্য অদৃশ্য দীর্ঘশ্বাস।
কবিতার মায়ের প্রসবকাল আসলে কখন? ঠিক কোন সময়টাতে? কেনো? কীভাবে? কেউ জানে না, স্বয়ং কবিও না। কবিতার কি মা-বাবা আছে? ঘরবাড়ি? কবিতা কি হাঁটে? হামাগুঁড়ি দেয়? দৌড়ঝাঁপ করে? কবিতার আসলে কেউ নেই, সে একান্তই একা। আবার কবিতার সবাই আছে। আর তাই কবিতা বসবাস করে শূন্যতা আর পূর্ণতার ভেতরে। কবিতা কিছুই করে না। আবার কবিতা সবই করে। কবিতা হয়ে থাকে বড্ড একরোখা। আসবে, যাবে, ইচ্ছেমতো খেলবে, রঙিন ডানা মেলবে, হাসবে, কাঁদবে, পুড়বে, পোড়াবে, ঘুরবে, ঘোরাবে। সবই তার নিজস্ব ইচ্ছা-অনিচ্ছায়। কবিতার স্থির কোনো সংজ্ঞা নেই। কবিতা নিতান্তই মনোভাবনার গভীর নির্যাসমাত্র।
কবিতা এক অভিমানী সত্তার নাম যার ভাঁজে ভাঁজে হরেক রকম অনুভূতি-অনুভব ক্ষণে ক্ষণে বদলায় রূপ-রস-গন্ধ। কবিতার যেমন ছন্দ আছে, তেমনই গন্ধ আছে। কবিতারা ইচ্ছে হলে কথা কয়, ইচ্ছে না হলে চুপ। আবার ইচ্ছে হলে গন্ধ ছড়ায়, ইচ্ছে হলে রূপ। মনের গভীরে আচমকা কোনো ভালোলাগা কাজ করলে দেহমনে একটা অদ্ভুত অনুভূতি হয়, শিরশির করে ওঠা শরীরে মৃদু কম্পন জাগে, ঘাড়ের নিচ থেকে মেরুদণ্ড বেয়ে অদৃশ্য একটা শীতল স্রোত আস্তে করে নিচের দিকে নেমে যায়। এটা কী? এই ব্যাপারটা কেউ কাউকে বলতে পারে না, বুঝাতে পারে না অন্যকে। অথচ এই না বলতে পারা অনুভূতিটুকুই কবিতার অন্যতম জন্মভূমি।
কাউকে হয়তো হঠাৎ মনে ধরে গেলো, বলতেও পারা যাচ্ছে না, চলতেও পারা যাচ্ছে না। এই না পারাটাই হলো কবিতা। প্রকৃত কবিতা মূলত ‘শাব্দিক চিৎকার’। হরষে কি বিষাদে, ভালোয় কি মন্দে- কবিতার কণ্ঠস্বর যদি চিৎকারময় না হয় তবে তা কতোটুকু কবিতা হয়ে উঠতে সক্ষম তা অবশ্যই প্রশ্নের দাবি রাখে। এই চিৎকার কখনও সরব, কখনও নীরব। কানে কানে নয়, প্রাণে প্রাণে ছুঁয়ে যায় কিংবা আঁচড় দিয়ে যায় এই চিৎকার। এখানে ‘চিৎকার’ শব্দটাকে খানিকটা গোঁয়ার মনে হতে পারে। কবিতা হবে ‘চিৎকারময়’ কথাটা এই অর্থে যে, ছুঁয়ে যেতে না পারলে, প্রাণকে জাগাতে না পারলে সে কেমন করে কবিতা হয়ে ওঠবে? এই ‘চিৎকার’ মানে বাঙময়তা, প্রাণময়তা; তাই বলে প্রগলভতা নয়, চেঁচামেচি বা হট্টগোল নয়। কবিতার শরীরে জাগ্রত থাকে যে শব্দপ্রপাত তার আলাদা কোনো নামকরণ করা শক্ত। তবে ছন্দ, তাল, লয়, মাত্রা ছাড়াও উপমা, উৎপ্রেক্ষা, অনুপ্রাস, অলঙ্কার প্রভৃতিকে এড়িয়ে যাবার সুযোগ কোনোকালে ছিলো না, এখনও নেই। তাই বলে, শুধু ‘ডাল-খাল’, ‘বিল-কিল’, ‘কল-বল’ ইত্যাদি অন্তমিল বা অন্ত্যমিল দিলেই যে একটি লেখা প্রকৃত কবিতা হয়ে উঠবে না তা বরাবরই পরীক্ষিত।
অনেকের ধারণা- লেখায় অন্ত্যমিল না থাকলে তা বোধহয় কবিতা নয়। ইদানীং কতিপয় হাইব্রিড কবি কবিতার চরণে অন্ত্যমিলের জন্যে নানা রকম ‘ছন্দের সফট্ওয়্যার’ বা অ্যাপস ব্যবহার করেন বলেও শোনা যাচ্ছে। কবিতা তথা শিল্প-সাহিত্যকে বিনষ্ট করার জন্যে, দূষিত করার জন্যে এরা এতোটা উদগ্রীব কেনো তা বোধগম্য নয়। কেউ কেউ আবার কবিতা লেখার ব্যাকরণ শেখাচ্ছেন, কবিতার মান যাচাইয়ের দাঁড়িপাল্লা বানাচ্ছেন। অহরহ হচ্ছে কবিতা লেখার কর্মশালা। এগুলো আসলে কী জিনিস, ভাই? কবিতা কি হাতে কলমে শেখানোর বিষয়? কর্মশালায় কি কবি উৎপাদন করা হয়? আদৌ কি তা সম্ভব? হালের অনেক সাহিত্যবোদ্ধা নবীন লিখিয়েদের কবিতার মান যাচাই করতে গিয়ে পরীক্ষার খাতার মতো নম্বর দিতে শুরু করেন। কবিতা যেমনই হোক, তাকে তো আপনি পাশ ফেলের সার্টিফিকেট দিতে পারেন না। কবিতাকে মোহনীয় আর প্রাণময় করার জন্যে কবিতাকে ডানা মেলার সুযোগ দিতে হবে, সময়ও দিতে হবে। অকারণ অমূল্যায়ন কবি ও কবিতার অকাল অপমৃত্যু ঘটাবে নির্ঘাত।
কবির কবিতা থাকে স্বাধীন, মেঘের মতো; মেঘের যেমন কোনো সীমানা থাকে না, যেতে-আসতে লাগে না কোনো পাসপোর্ট-ভিসা। কবিতায় কী থাকবে আর কী থাকবে না তা নির্দিষ্ট করে দেবার সাধ্য নেই কারো। এ ক্ষেত্রে উল্লেখ্য- ‘কবি তার মতো লিখে-/ কবিতার মতো লিখে’ -(শাকীর এহসানুল্লাহ)।
লেখা ছন্দোবদ্ধই হোক আর মুক্তগদ্যই হোক- কবিতার পরতে পরতে কী থাকতে পারে, সেসব উপাদানকে সবিস্তারে জানা যে একজন কবির সবচেয়ে বড় দায়বদ্ধতা তাতে কোনো সন্দেহ নেই। সশস্ত্র যোদ্ধা যেমন সব হাতিয়ার তৈরি থাকা সত্ত্বেও প্রয়োজন ছাড়া ব্যবহার করে না; কবিকেও তেমন কবিতার ভ্রুণ থেকে আঁতুড়ঘর, জীবনযাপনের খুঁটিনাটি জানতে হবে, মানতে হবে। যখন যা প্রয়োজন কাজে লাগাতে হবে।
আজকালকার লিখিয়েদের প্রায়ই বলতে শোনা যায়- ‘কী হবে কবিতা লিখে! কবিতা এখন আর কেউ পড়ে না, কবিতার বাজার এখন মন্দা।’ ‘কবিতার বাজার’! কথাবার্তার কি অদ্ভুত ধরন! খুবই হাস্যকর। ‘কবিতার বাজার’ মানে কী? কবিতা কি বাজারি পণ্য? কবিতাকে মানুষের মননে ছড়িয়ে দেবার সমূহ প্রয়াস থাকা খুবই স্বাভাবিক, তাই বলে কবিতাকে আলতা-পালিশের মতোন পণ্য ভাবার প্রশ্নই আসে না। আত্মিক জমিতে কবিতার চাষাবাদ করতে করতে যারা একসময় ‘কবিতাদাস’ বা ‘শব্দশ্রমিক’ হয়ে যান তারা জানেন এবং মানেন, ‘কবিতা আসলে নাজিল হয়’। এমন ঘটনাও তো ঘটে, টানা ছয় মাস কবিতার দেখা নেই; হঠাৎ কোনো এক নিদভাঙা রাতে গোটা বিশেক কবিতার জন্ম হয়ে গেলো। হতেই পারে, অসম্ভব কিছু তো না। যারা প্রকৃতই ‘শব্দশ্রমিক’ বা ‘কবিতাদাস’, কবিতা তাদের কাছে এক ঘোরগ্রস্ততার নাম। এই ঘোরের ভেতরে তারা যা দেখে, যা অনুভব করে- সাধারণে তা দেখেও না, অনুভবও করে না।
কথা হচ্ছিল ‘কবিতা এখন আর কেউ পড়ে না’ বিষয়ে। এ কথা যিনি বলেন তার জন্যে প্রশ্ন, ‘কেউ পড়ে না- মেনে নেয়া গেলো; আপনি পড়েন কি? হলফ করে বলুন তো কোনো সাময়িকীতে ছাপা হওয়া নিজের কবিতাটা যতোবার পড়েন, অন্যদের কবিতাগুলোও কি ততোবার পড়েন, নিশ্চয়ই নয়। তাহলে কেনো আশা করেন যে, আপনার কবিতা অন্যে পড়বে?’
ভালো মানের দশটা বিশটা কবিতা হৃদয় দিয়ে পড়লে ভেতরের মানুষটা হেসে ওঠবে, কেঁদে ওঠবে; একসময় হয়তো আর্তনাদও করবে। এইসব হৃদয়ধোয়া হাসি-কান্না-আর্তনাদকে কালি মেখে ঢেলে দিন সাদা কাগজের উদার উঠোনে। দেখুন না কী হয়!
ভালো কবিতা কী? কবিতার যেহেতু ব্যাকরণ নেই, সংজ্ঞা নেই; ভালো কবিতা নির্বাচনের একটাই উপায়- কবিতার বিষয়বস্তু, বক্তব্য, ভাষা, শব্দের কারুকাজ প্রভৃতি পাঠকহৃদয়কে ছুঁয়ে যাচ্ছে কি না, নাড়া দিচ্ছে কি না। ভালো কবিতা মানেই অনেকগুলো সুন্দর শব্দ, সুন্দর বাক্যের সমন্বয় ঘটানো নয়। কবিতা জীবনের প্রতিচ্ছবি। কবিতায় যেমন থাকে হাসি-কান্না, সুখ-দুঃখ; তেমনই থাকে প্রেম-বিরহ, দ্রোহ-বিদ্রোহ, জীবনবোধ-দর্শন আরো কতো কি!
শুধু ‘ওগো’, ‘হ্যাঁগো’ দিয়ে কবিতা হয় না। এর জন্যে নিবিষ্ট পাঠ দরকার। ‘পাঠ’ মানেই গাদাগাদা বই আয়ত্ত করা নয়। পাঠ মানে জীবনপাঠ, পাঠ মানে সময়পাঠ। গাছের শাখ, মাছের ঝাঁক- পাঠ করতে হবে। ফুল-পাখি-নদী, ভিখারি-অসহায়-নিঃস্ব, আকাশ-বাতাস, আগুন-পানি; সব পাঠ করতে হবে। ক্রমে ক্রমে ভেতরটা ঋদ্ধ হবে। কবিতা তখন আর লিখতে হবে না, কবিতা লেখা হয়ে যাবে।
মূলত, পড়ি না বলেই পড়ে না। পাঠ, অনুভব আর গভীর অনুধাবনের মধ্য দিয়ে নিটোল শরীর নিয়ে কবিতা হয়ে উঠুক অর্নিবাণ স্ফুলিঙ্গ। জয় হোক অনুভবের, জয় হোক কবিতার।
*সম্পাদক, সাহিত্যকাগজ ‘ৎ’ (খণ্ড-ত)
আরও পড়ুন: শহীদুল জহিরের গল্প

Mostafizur Rahman is a professional content writer at CrawlText, specializing in SEO articles, blog posts, and web copy that drive engagement and conversions. With experience crafting clear, audience-focused content for almost all the niches, he delivers well-researched, optimized pieces on deadline. He combines editorial rigor with keyword strategy to boost traffic, authority, and reader retention across blogs, platforms, and newsletters.
