পোল্ট্রি মুরগীর খামার স্থাপনের সরকারি নিয়ম: ফার্ম আইন 2025

Mostafizur Rahman
Mostafizur Rahman

Mostafizur Rahman is a professional content writer at CrawlText, specializing in SEO articles, blog posts, and web copy that drive engagement and conversions. With experience crafting clear, audience-focused content for almost all the niches, he delivers well-researched, optimized pieces on deadline. He combines editorial rigor with keyword strategy to boost traffic, authority, and reader retention across blogs, platforms, and newsletters.

বাংলাদেশে পোল্ট্রি শিল্প আজ একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। বাণিজ্যিকভাবে মুরগির খামার স্থাপন করে অনেকেই আত্মনির্ভরশীল হচ্ছেন। তবে মুরগির খামার স্থাপন ও পরিচালনার ক্ষেত্রে সরকারের নির্ধারিত কিছু বিধি ও শর্ত মানা অত্যন্ত জরুরি।

এসব নিয়ম অনুসরণ করলে যেমন খামারটি হবে স্বাস্থ্যসম্মত, তেমনি জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকিও কমে আসে। নিচে বিধি-১৮ অনুসারে মুরগির বাণিজ্যিক খামার স্থাপনের বিস্তারিত শর্তাবলী তুলে ধরা হলো।

পোল্ট্রি ফার্ম মানে কী

পোল্ট্রি ফার্ম হলো এমন একটি ব্যবসা যেখানে মুরগি পালন করে ডিম, মাংস বা বাচ্চা উৎপাদন করা হয়। এটি কৃষি নির্ভর ব্যবসার একটি জনপ্রিয় শাখা, কারণ অল্প পুঁজি ও কম জায়গায়ও শুরু করা যায়।

পোল্ট্রি মুরগির বাণিজ্যিক ফার্ম করার নিয়ম [বিধি-১৮]: ফার্ম আইন 2025

পোল্ট্রি মুরগির বাণিজ্যিক খামার স্থাপনে শর্তাবলী
  • ১. একটি বাণিজ্যিক খামার হতে আরেকটি বাণিজ্যিক খামারের দূরত্ব কমপক্ষে ২০০ মিটার হতে হবে।
  • ২. কন্ট্রোল বা ওপেন সিস্টেম হাইজ থাকতে হবে।
  • ৩. ওপেন হাইজের ক্ষেত্রে সেড থেকে সেডের দূরত্ব ৪৫ ফিট হতে হবে।
  • ৪. বাজারজাত করার সময় প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার থেকে জনস্বাস্থ্যের ক্ষতি হবে না এই মর্মে সনদ নিতে হবে।
  • ৫. খামারের স্থান উচ্চ, শুষ্ক ও জলাবদ্ধতা মুক্ত হতে হবে।
  • ৬. লোকালয়ে কোনো দুর্গন্ধ বা অসুবিধার সৃষ্টি করতে পারবে না।
  • ৭. খামার দূষণমুক্ত পরিবেশে থাকতে হবে।
  • ৮. অসুস্থ মুরগির চিকিৎসার জন্য পৃথক সেডের ব্যবস্থা করতে হবে।
  • ৯. খামারে লোকজন বা যানবাহন প্রবেশে নিয়ন্ত্রনের ক্ষেত্রে স্বাস্থ্যসম্মত ফুটবাথ, জ্যাকেট ও বুটের ব্যভস্থা করতে হবে।
  • ১০. চিকিৎসা ও ঔষধপত্রের ব্যবস্থা থাকতে হবে।
  • ১১. খামারে রোগাক্রান্তের হার, লক্ষণ, প্রাদুর্ভাবের সময় চিকিৎসা, পোস্টমর্টেম পরীক্ষার রিপোর্ট ও অন্যান্য পরীক্ষার ফলাফলসহ রোগ সংক্রান্ত রেকর্ড সংরক্ষণ থাকতে হবে। কোন প্যারেন্ট স্টক বা খামার হতে বাচ্চা সংগৃহীত তার রেকর্ড সংরক্ষণ থাকতে হবে।
  • ১২. মৃত বার্ড ডিসপোজালের জন্য কমপক্ষে পিট থাকতে হবে। লিটার ম্যানেজমেন্টের জন্য কম্পোস্ট সিস্টেম থাকতে হবে। মৃত মুরগি পিটে ফেলতে হবে।
  • ১৩. খামারে উন্নত বায়ো-সিকিউরিটি অণুসরন করতে হবে।
  • ১৪. আবাসিক বাড়ির ভিতরে বাণিজ্যিক খামার স্থাপন করা যাবে না।
  • ১৫. খামার নিবন্ধনকৃত হতে হবে।

এখন বিস্তারিত জানা যাক:

১. খামারের দূরত্ব

একটি বাণিজ্যিক খামার থেকে অন্য খামারের দূরত্ব কমপক্ষে ২০০ মিটার হতে হবে। এটি রোগের বিস্তার রোধে সহায়তা করে এবং বায়ো-সিকিউরিটি বজায় রাখতে সাহায্য করে।

২. খামারের ধরণ

খামার হতে হবে কন্ট্রোল সিস্টেম বা ওপেন সিস্টেম হাউজ ভিত্তিক। কন্ট্রোল সিস্টেম মানে হচ্ছে পরিবেশ নিয়ন্ত্রিত (temperature-controlled) আধুনিক খামার যেখানে মুরগির জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা, আলো ও বাতাসের ব্যবস্থা থাকে। ওপেন সিস্টেমে প্রাকৃতিক বাতাসের মাধ্যমে পরিবেশ নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

৩. সেডের দূরত্ব

যদি খামারটি ওপেন হাউজ হয়, তবে একটি সেড থেকে অন্য সেডের দূরত্ব ৪৫ ফিট হতে হবে। এটি খামারের ভেতরে পর্যাপ্ত বাতাস চলাচল নিশ্চিত করে এবং রোগের সংক্রমণ কমায়।

৪. বাজারজাতকরণে স্বাস্থ্য সনদ

খামার থেকে মুরগি বা ডিম বাজারজাত করার আগে প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তার কাছ থেকে স্বাস্থ্য সনদ নিতে হবে। এই সনদ দ্বারা নিশ্চিত করা হয় যে, বিক্রিত মুরগি জনস্বাস্থ্যের কোনো ক্ষতি করবে না।

৫. খামারের অবস্থান

খামারের স্থান হতে হবে উচ্চ, শুষ্ক ও জলাবদ্ধতামুক্ত। নিচু জমিতে বা বন্যাপ্রবণ এলাকায় খামার স্থাপন করলে মুরগির স্বাস্থ্য ঝুঁকিতে পড়ে এবং রোগ বিস্তারের আশঙ্কা বেড়ে যায়।

৬. দুর্গন্ধ ও অসুবিধা রোধ

খামার এমন স্থানে হতে হবে যেখানে লোকালয়ে দুর্গন্ধ বা অসুবিধা সৃষ্টি না হয়। অর্থাৎ আবাসিক এলাকার কাছাকাছি খামার না রাখাই উত্তম, যাতে পরিবেশ ও মানুষ দু’য়েরই সুরক্ষা থাকে।

৭. দূষণমুক্ত পরিবেশ

খামার সর্বদা দূষণমুক্ত ও পরিচ্ছন্ন পরিবেশে রাখতে হবে। লিটার (মুরগির মল-মূত্র ও খাদ্যের বর্জ্য) নিয়মিত পরিষ্কার ও সঠিকভাবে ব্যবস্থাপনা করা জরুরি।

৮. অসুস্থ মুরগির জন্য আলাদা সেড

যদি কোনো মুরগি অসুস্থ হয়, তাকে পৃথক সেডে চিকিৎসার জন্য রাখতে হবে। এটি রোগের সংক্রমণ অন্য মুরগির মধ্যে ছড়িয়ে পড়া রোধ করে।

৯. প্রবেশ নিয়ন্ত্রণে স্বাস্থ্যবিধি

খামারে প্রবেশের সময় ফুটবাথ, জ্যাকেট ও বুট ব্যবহারের ব্যবস্থা থাকতে হবে। এটি বাহ্যিক জীবাণু বা ভাইরাস খামারে প্রবেশ রোধ করে এবং মুরগিকে সুরক্ষিত রাখে।

১০. চিকিৎসা ও ওষুধের ব্যবস্থা

প্রতিটি খামারে প্রয়োজনীয় ওষুধ ও চিকিৎসা সরঞ্জাম রাখতে হবে। প্রয়োজনে প্রশিক্ষিত কর্মী বা পশুচিকিৎসকের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসা দিতে হবে।

১১. রোগ সংক্রান্ত রেকর্ড সংরক্ষণ

খামারে রোগের হার, লক্ষণ, চিকিৎসা, পোস্টমর্টেম রিপোর্ট, পরীক্ষার ফলাফল ইত্যাদি তথ্য লিখিতভাবে সংরক্ষণ করতে হবে। এছাড়া কোন খামার বা প্যারেন্ট স্টক থেকে বাচ্চা আনা হয়েছে, সেই রেকর্ডও রাখতে হবে।

১২. মৃত মুরগির ব্যবস্থাপনা

প্রতিটি খামারে মৃত মুরগি ফেলার জন্য একটি পিট (গর্ত) থাকতে হবে এবং লিটার ম্যানেজমেন্টের জন্য কম্পোস্ট সিস্টেম চালু রাখতে হবে। মৃত মুরগি কখনোই খোলা জায়গায় ফেলা যাবে না, এতে রোগের বিস্তার হতে পারে।

১৩. উন্নত বায়ো-সিকিউরিটি

খামারে উন্নত বায়ো-সিকিউরিটি ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে। যেমন– খামারে প্রবেশের আগে স্যানিটাইজেশন, নির্দিষ্ট পোশাক পরিধান, বাইরের প্রাণী বা অপ্রয়োজনীয় লোকের প্রবেশ নিষিদ্ধ করা ইত্যাদি।

১৪. আবাসিক এলাকায় খামার নিষিদ্ধ

আবাসিক বাড়ির ভেতরে বাণিজ্যিক খামার স্থাপন করা যাবে না। কারণ এটি পরিবেশদূষণ ও জনস্বাস্থ্যের ঝুঁকি তৈরি করে।

১৫. নিবন্ধন বাধ্যতামূলক

প্রত্যেক বাণিজ্যিক খামার সরকারি নিবন্ধনপ্রাপ্ত হতে হবে। নিবন্ধন ছাড়া খামার চালানো আইনত দণ্ডনীয় অপরাধ। নিবন্ধনের মাধ্যমে খামার সহজে সরকারী সহায়তা ও প্রশিক্ষণ পাওয়ার সুযোগও সৃষ্টি হয়।

আবাসিক এলাকায় পোল্ট্রি মুরগির ফার্ম

বর্তমান সময়ে অনেকেই স্বল্প পরিসরে উদ্যোক্তা হিসেবে পোল্ট্রি মুরগির ফার্ম করতে আগ্রহী। কিন্তু এই ব্যবসা শুরু করার আগে জানা দরকার- আবাসিক এলাকায় পোল্ট্রি ফার্ম করা কতটা আইনসম্মত, নিরাপদ ও সামাজিকভাবে গ্রহণযোগ্য

আবাসিক এলাকায় ফার্ম করার আইনগত দিক

বাংলাদেশে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন ও স্থানীয় সরকার (পৌরসভা বা ইউনিয়ন পরিষদ) কর্তৃক নির্ধারিত বিধিমালা অনুযায়ী, আবাসিক এলাকায় বাণিজ্যিক পোল্ট্রি ফার্ম স্থাপন সাধারণত নিষিদ্ধ

  • ফার্মের দুর্গন্ধ, বর্জ্য, ও শব্দ প্রতিবেশীর জন্য বিরক্তিকর হতে পারে।
  • দূষণের কারণে পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসন ফার্ম বন্ধের নির্দেশ দিতে পারে।
  • বড় পরিসরে ফার্ম করতে হলে পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমতি ও স্থানীয় কর্তৃপক্ষের লাইসেন্স প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত সমস্যা

আবাসিক এলাকায় মুরগির ফার্ম থাকলে আশেপাশের মানুষের জন্য এটি স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করতে পারে।

  • বর্জ্য ও মুরগির বিষ্ঠা থেকে দূষণ, দুর্গন্ধ ও মাছি-মশার জন্ম হয়।
  • সংক্রামক রোগ যেমন বার্ড ফ্লু বা স্যালমোনেল্লা ছড়ানোর ঝুঁকি থাকে।
  • শিশুসহ প্রতিবেশীদের জন্য এটি শ্বাসকষ্ট ও অ্যালার্জির কারণ হতে পারে।

বিকল্প সমাধান

যারা পোল্ট্রি ব্যবসা করতে চান, তারা চাইলে আবাসিক এলাকা থেকে কিছুটা দূরে খালি বা কৃষিজমিতে ফার্ম করতে পারেন।

  • অল্প পরিসরে “হোম বেসড মিনি ফার্ম” করা যেতে পারে, তবে সেটি যেন পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন, বদ্ধ ও দুর্গন্ধমুক্ত থাকে
  • বর্জ্য নিষ্কাশনের সঠিক ব্যবস্থা রাখতে হবে।
  • স্থানীয় প্রশাসনের অনুমতি নিয়ে ক্ষুদ্র পর্যায়ে শুরু করলে আইনি জটিলতা কমে।
Mostafizur Rahman
Mostafizur Rahman

Mostafizur Rahman is a professional content writer at CrawlText, specializing in SEO articles, blog posts, and web copy that drive engagement and conversions. With experience crafting clear, audience-focused content for almost all the niches, he delivers well-researched, optimized pieces on deadline. He combines editorial rigor with keyword strategy to boost traffic, authority, and reader retention across blogs, platforms, and newsletters.

Scroll to Top