Mostafizur Rahman is a professional content writer at CrawlText, specializing in SEO articles, blog posts, and web copy that drive engagement and conversions. With experience crafting clear, audience-focused content for almost all the niches, he delivers well-researched, optimized pieces on deadline. He combines editorial rigor with keyword strategy to boost traffic, authority, and reader retention across blogs, platforms, and newsletters.
নাশতা করছিল সুমন, হাতে চাকরির খবর। ভাই ভাবি ভাইপো আগে খায়, শেষ করে চলে গেছে। সুমনকে খেতে দিয়ে আয়না গেছে মাকে খাবার দিতে। সেখান থেকে আওয়াজ এলোঝনঝন। আয়না পাগলির ওই হলো কাজ, সপ্তায় সপ্তায় কাচের কিছু ভাঙতেই হবে। ওর জন্যে কি এখন টিনের তৈজসপত্র কিনতে হবে- ভাবল সুমন। ওদিক থেকে বাজখাঁই বকে উঠল ভাই-ভাবি। বকে উঠলো মাও, তবে স্বরটা তার এমন, সুমনের মনে হলো নিচতলার কুকুরটা রেগে গেছে কোনো কারণে। রাগে গজরাতে গজরাতে বেরিয়ে এলো আয়নাও। হাতে তার প্লেটের ভাঙা টুকরো। আরেকটা প্লেটে খাবার নিতে নিতে বিড়বিড় করল সে। ‘কী কয় না কয় মালুম হয় না, খালি ঘেউঘেউ, ঘোঁৎঘোঁৎ। ভাবিজান ঠিক কতাই কয়, মানুষ না মনোয়!’
সম্ভবত সেবারই প্রথম ব্যাপারটা খেয়াল করল সুমন। হাঁটাচলা বেশি হলেই বসে বসে হাঁপায় মা। হাঁপানি তো এ বয়সে স্বাভাবিকই, চিন্তা জাগালো তার ধরণটা। অতিরিক্ত লম্বা হয়ে গেছে জিব। দু’পাটি দাঁতের পাহারা পেরিয়ে ঝুলে থাকে বাইরে। ডগা থেকে ঝুলে থাকে স্বচ্ছ আঠালো লালা। হাঁপানির সমস্যা মনে করে ডাক্তার দেখিয়েছে ওরা। ব্যাপারটা তবু বেড়েই চললো দিনে দিনে।
পরের ছুটিতে বাসায় এসে দেখল অবস্থার আরও অবনতি। ঘরে থাকতে চায় না মা, হাতপা গুঁটিয়ে কুণ্ডুলি পাকিয়ে বসে থাকে দরজার কাছে, মাঝে মাঝে গেটেও। খুব বকাবকি করত সুমন। ধরে ধরে নিয়ে যেত ঘরে। বাবা-মায়ের ঘরটা তখন স্টোররুম, মা ঘুমাত ড্রয়িং রুমে। রাত বিরাতে ঘুম ভাঙলে, বা ওয়াশরুমে যেতে যেতে, শোনা যেত কাঁইকুঁই তার। বিড়াল বা কুকুরের ছানা সঙ্গে নিয়ে ঘুমায় নাকি? হঠাৎ হঠাৎ আলো জ্বালিয়ে অবশ্য মাকেই পেত একা।
মাছ-মাংসের চেয়ে হাড়-কাঁটা চিবুনোতে বেশি আগ্রহ দেখা যাচ্ছিল তার। অন্যদের ফেলে দেওয়া হাড়-কাঁটাও নাকি কুড়িয়ে নিয়ে খায়, বলত আয়না। বিশ^াস করতে সুমনকে অপেক্ষা করতে হয়েছিল সেই রাত পর্যন্ত, যে-রাতে কিচেনের একটানা এক ঘুটুং ঘুটং শব্দে ঘুম ভেঙেছিল ওর। আচমকা আলো জ¦ালাতেই দেখল চমকে তাকিয়েছে মা, হাতে একটা নলি। মুখে আরেকটা। সামনেই পড়ে আছে ময়লার ঝুড়ি, উচ্ছিষ্ট ছড়িয়ে আছে এলোমেলো।
ভাই-ভাবির সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলার জো ছিল না। কথায় কথায় ওর চাকরির কথা উঠত। ‘সাধ্যে যেমন কুলোয় তেমন করেই রাখছি। এর চেয়ে ভালো করে রাখতে হলে নিয়ে যা তোর কাছে!’ উপায় থাকলে অবশ্য তা-ই করত সুমন। কিন্তু হলে কি আর সেই সুযোগ আছে? টিউশনির টাকাও এত বেশি না যে মাকে নিয়ে মেসে থাকবে। সুমন পড়েছিল মহা ফাঁপরে। চিন্তায় চিন্তায় চুল ছেঁড়ার জোগাড়। নেট ফেট ঘেঁটেও বিশেষ লাভ হলো না। কোথাও কিছুই ঘটেনি এমন। ওর ধারণা, এটা কোনো মানসিক সমস্যার জের। মনোবৈকল্যের প্রভাবেই হয়তো বদলে যাচ্ছে শরীর। তা ডাক্তার দেখানোর কথা বললেই বেঁকে বসত ভাই-ভাবি, যদি জানাজানি হয়! সহজ উপায় হিসেবে তারা ঘুমের বড়ি খাইয়ে দিত। পড়ে পড়ে মা ঘুমাত সারাদিন। আর রাত-বিরাতে ঘেউঘেউ শব্দে ভরে থাকত ঘর। চমকে চমকে ঘুম ভেঙে যেত বাচ্চাদের। ভাবিও নাকি ভয়তেড়ে হয়ে গিয়েছিল। আজ এই করেছে, কাল ওই করেছে- অভিযোগের পর অভিযোগ আসত ফোনকল বেয়ে। একদিন নাকি কামড়েও দিয়েছে ভাবিকে। বাচ্চারা তো ভয়ে থাকতেই চায় না বাসায়। বাধ্য হয়েই মাকে তাই বৃদ্ধাশ্রমে রেখে এসেছে ভাইয়া। ‘নতুন হয়েছে বৃদ্ধাশ্রমটা। থাকা খাওয়ার ব্যবস্থা ভালো। আমি গিয়ে দেখে আসি সপ্তায় সপ্তায়,চিন্তা করিস না। জায়গাটা শহর থেকে বেশ দূরে, লোক জানাজানিরও ভয় নেই।’
শুনেই ছুটে গিয়েছিল সুমন। বাড়ির চেয়ে খারাপ থাকে না মা সেখানে। তবু, দুই দুইটা ছেলে থাকতে কেন মানুষটা পড়ে থাকবে নির্বান্ধব অমন? সুযোগ হলেই সে ঘরে নিয়ে আসবে মাকে, আগলে রাখবে ঠিক তেমন, ছোটবেলায় মা-বাবা যেমন রেখেছিল ওদের। তা চাকরির অপেক্ষা যেন ফুরোচ্ছিলই না। যতদিনে ফুরোলো, মার জোরও ফুরিয়ে এসেছে ততদিনে। একা ঘরে তাকে রেখে অফিস করবে কী করে সুমন? তারওপর ঈস্ট খাওয়া ময়দার মতো ফুলে উঠেছে ব্যস্ততা। লকডাউন আর শাটডাউনের চোটে জীবন জেরবার। সারাদিন বাইরে বাইরে ঘোরা, কখন না কখন ধরে ফেলে ভাইরাস। আতঙ্কের শেষ নেই। এই অবস্থায় মার কাছে আসতেও ভয় করে, অসুস্থ মানুষ, ভাইরাস লাগলে আর ধাক্কা সামলাতে পারবে না। তা এমন স্বপ্ন দেখেছে কাল, না এসে আর পারেনি আজ ও।
দৌড়তে দৌড়তেই এলো প্রায়। ঢুকেই দেখে অফিসে বেজায় ভীড়। এমন ভীড় তো সাধারণত দেখা যায় না। ঘটনা কী? গাণ্ডুষ মতো একজনকে জিজ্ঞেস করল, কী ব্যাপার। উত্তর দেওয়ার সে গরজ করল না। জানার গরজও কি ছিল খুব সুমনের? তাই এগিয়ে গেল সিঁড়ির দিকে। দোতলায় উঠবে। বাঁ করিডোর বেয়ে চতুর্থ রুমটায় শুয়ে আছেন মা। গিয়ে বসবে পাশে। খাবার খাওয়াবে। তা সিঁড়ির মুখে উঠতেই কানে গেল কথাটা- পাগল না হলে কেউ কুকুর রাখতে আসে বৃদ্ধাশ্রমে? শুনতেই চমকে উঠল ও। পথ ঘুরিয়ে ছুটে গেল অফিসের দিকেই। ঠেলে ঠুলে ভেতরে ঢুকতেই প্রাণ পেল অবশ্য। না, যা ভেবে দম যাচ্ছিল, তা না। সত্যিকারের কুকুর নিয়েই কথা হচ্ছে সেখানে। মাঝখানে দাঁড়িয়ে আছে একটা মেয়ে। চোখে মুখে তার তেজের বারুদ। এত লোকের উপস্থিতিতেও বিব্রত নাএতটুকু। তবে ঝাল ঝরছে বৃদ্ধাশ্রমের ম্যানেজারের মুখে। ‘এ কি মশকরা নাকি? নিরুপায় হয়া বাবা মাকে থুয়ে যায় মাইনষে, আমরা তাগোর দেখভাল করি। সেবার ব্রত নিয়াই করি। আর উনি আইছেন কুকুর রাখতে। ট্যাকার গরম! ট্যাকা দেইখাই যেন হা করব, আমি কি কাঠের পুতুল!’
এর মধ্যেই এক কেয়ারটেকার এগিয়ে এলো সুমনের দিকে। ‘আরে মুকুল ভাই! আসেন, আসেন, বসেন।’ উত্তরে একটু হাসল ও। তবে দাঁড়ালো না আর। দৌড়ে উঠে গেল ওপরতলায়।
মেঝেতে পড়ে আছে মা। ডান দিকে কাৎ, হাত-পা ছড়ানো। মুখ খোলা, জিব বের হয়ে আছে। লালা পড়ে ভিজে গেছে মেঝে। গতবারের চেয়েও ভাঙা মনে হচ্ছে শরীরটা। ও গিয়ে দাঁড়াতেই চোখ খুলে তাকালো। পাশ ফিরে শুলো তারপর। পাজাকোলা করে তাকে খাটে শুইয়ে দিল সুমন। চোখভরা পানি ওর। গামছা ভিজিয়ে মুখ মুছিয়ে দিল, যতটা পারে গা হাত পাও। খাবার নিয়ে গিয়েছিল একটু, খেতে দিল। খাচ্ছে না দেখে ও-ই দিলো মুখে তুলে।
এভাবেই কি একা পড়ে থাকে মা সবসময়? বকতে হবে তো কেয়ারটেকারকে। কী কী বলে বকবে ভাবতে ভাবতে আবার ঢুকলো গিয়ে অফিস কক্ষে। মেয়েটা নেই তখন আর, ভিড়টাও কম। তবে ম্যানেজারকে মনে হয় বকায় পেয়েছে আজ। ‘এটা কিন্তু ঠিক না, মুকুল সাহেব। আপনের ভাইয়ের নাম্বারটা তো সবসময়ই বন্ধ, আপনেরেও যতবার কল করি আপনি ধরেন না। কেন? বেকামে গ্যাজানোর লেইগা তো আর কল করি না। গত পরশু জ্বর উঠছিল আপনের মায়ের, তাই ফোন দিছিলাম। এমন একটা নাম্বার দিয়া যাইবেন, যেটা সঙ্গে রাখেন।’
শুনে কিছুক্ষণ আমতা আমতা করল ও। সরি টরি বলে, বানিয়ে বানিয়ে আরেকটা নাম্বার দিয়ে তবেই পেল ছাড়া। লোকটা বলল, মায়ের অবস্থা দিনদিন আরও খারাপের দিকে যাচ্ছে। একটা ভালো ডাক্তার দেখালে হয়তো উপকার হতো। শুনে কিছুক্ষণ ভাবল ও। দেখা গেল, জানাজানি হওয়ার ভয় ওরও করছে।ফলে ‘আপনেরা না পারেন, ট্যাকা দিয়েন, আমরাই দেখানোর ব্যবস্থা করবোনে।’ বলতেই লোকটার হাতে গুঁজে দিলো টাকা কিছু। আর দিলো বকশিস। দিয়ে বের হচ্ছে যখন, লোকটা জানতে চাইলো সুমন নামে ওর কোনো ভাই আছে কিনা। শুনেই চমকে উঠলো সুমন। থতমত খেয়ে বলল, ‘কই, না তো, কেন?’ ‘জ্বরের ঘোরে সেদিন ভুল বকতেছিল মানুষটা। এমনিতে তো তার কথা বোঝন যায় না, তয় নার্স বলতেছিল, মাঝে মাঝে নাকি সুমন সুমন করে অস্থির হয়।’ কথাটা বুকের ভেতর ঝড় তুলল সুমনের। তবে মুখের ওপর শান্তি এঁকে বলল, ‘ওহ হ্যাঁ, আমার এক কাজিন ছিল সুমন, ছোটবেলা থেকে মায়ের কাছেই মানুষ। বড় হয়ে আর খোঁজ খবর রাখে না। বোঝেনই তো।’ বলে বেরিয়ে এলো দ্রুত।
গেটের দিকে লোকজন তখনও। চোখ মুছতে মুছতে ও তাই এগিয়ে গেল সামনের ফাউন্টেনের দিকে। গেটের পাশেই দাঁড়িয়ে আছে সৌন্দর্যবর্ধক ঝরনাটা। চারপাশ দিয়ে উঁচু করে শান বাঁধানো পাড়। গিয়ে সেখানে বসতেই খেয়াল হলো পাশেই বসে আছে সেই মেয়ে।
ময়লারঙের জিন্স, বাহারি স্যান্ডেল আর গেরুয়া ফতুয়া পরা। গলায় ঝোলানো ওড়নার মতো ঝুলে আছে চোয়াল। চোখেমুখে ক্লান্তির ঢেউ। বয়স বড়জোর ত্রিশ। আড়চোখে তাকে দেখতে দেখতেই সুমনের ঝোঁক চাপল কথার। ‘তা যা-ই বলুন, কুকুরকে কেউ বৃদ্ধাশ্রমে রাখে?’
তপ্ত কড়াইয়ে তেল পড়েছে যেন, ছ্যাঁৎ করে উঠলো মেয়েটা। ‘কিছু না জেনে না বুঝে কথা বলবেন না অযথা। যান আপনি আপনার কাজে যান।’ শুনেই ওর ইগো জাগল, নাকি আগ্রহ, কে জানে। বলল, ‘জানি না বলেই তো জানতে চাচ্ছি। মানুষের বৃদ্ধাশ্রমে কুকুর রাখার ইচ্ছে হলো কেন আপনার?’
‘এত ফোস ফোস করল, কুকুর কুকুর করে তাড়ালো আমাকে, তা কুকুর তো এরা আগে থেকেই রেখেছে এখানে। এখানে যে একজন বৃদ্ধ থাকে, দিনে দিনে যে কুকুর হয়ে উঠছে, জানেন?’ চমকে তাকালো সুমন এবার। আশংকা আর আতংক ছড়িয়ে পড়ল প্রতিটা রোমকূপে। ফলে কথা বের হতে চাইলো না মুখ দিয়ে। শুধু বলল, ‘কী বলছেন, তা কী করে সম্ভব।’
‘সম্ভব, সবই সম্ভব।’ বলেই মেয়েটা এগিয়ে দিলো তার মোবাইল। সেখানে একটা ভিডিও। ভিডিওতে কথা বলছে মা। ঘন লালা ঝরছে। সেটা মাঝে মাঝে মুখে নিচ্ছে, মাঝে মাঝে ফেলছে। আর ঘেউঘেউয়ের মতো শব্দ করছে মাঝেমাঝে। মিনিট তিনেকের ভিডিও, দেখে শেষ করতে পারল না ও। তার আগেই সেটা ফেরত দিলো মেয়েটাকে। ব্যাপারটা তাহলে গোপন থাকছে না আর! ভাবনাটা মুখে ফুটে উঠেছিল বোধহয়। মেয়েটাও তাকিয়ে ছিল একদৃষ্টে। চেহারা যে ওর মায়ের মতোই প্রায়, ঠিকঠাক সেটা পড়ে নিয়েই বলল-
‘উনি আপনার কে হন, মা, না খালা?’
এবার যেন বাজই পড়ল মাথায়। কী ঘটছে এসব! কে এই মেয়ে? কীভাবে চেনে মাকে? ওকেই বা জানে কী করে? সবচেয়ে বড় কথা- হাতেও পেয়েও ভিডিওটা ও ডিলিট করল না কেন? এত প্রশ্নের তোড়, কোনটা সামলে কোনটা বলবে বুঝে উঠতে পারল না সুমন। ফলে আমতা আমতাই বেরুলো। ‘কী যা তা বলা শুরু করেছেন আন্দাজে!’
শুনেই একটু হাসার চেষ্টা করল মেয়েটা। হাসিটা সুন্দর। মুখ অমন মলিন না হলে সেটা দারুণ ফুটত চেহারায়। ‘আন্দাজে বলছি না।’ ম্লান হাসিটা মুখে করেই সে বলল, ‘উনাকে আমি ছোটবেলা থেকেই চিনি। চিনি বলতে তার কথা শুনেছি আরকি। বাবার খুব প্রিয় মানুষ, বিয়ে হওয়ারও কথা ছিল ওঁদের। শেষ মুহূর্তে ভেঙে গিয়েছিল কী এক ঝামেলায়।’
‘বুঝেছি, আমগাছের ছাল নিয়ে হয়তো জামগাছে লাগাতে চাইছেন। না, এমন কিছু কোনোদিনই বলেনি মা আমাদের। বাবার সঙ্গেই বিয়ে ঠিক হয়েছিল তার, বাবার সঙ্গেই সংসার করেছে।’
‘আচ্ছা, তাহলে মা।’ বলে হাসল আবার। চারপাশ ঘিরে দেবদারু গাছের সারি। হেলে পড়া সূর্যের আলো তার ছায়া ঢেলে দিচ্ছে। ওড়না দিয়ে মুখের ওপর চেপে বসা ছায়া মুছতে মুছতে মেয়েটা কথা শেষ করল: আতহার আঙ্কেলের সঙ্গেই বিয়ে হয়েছিল, ঠিক। কিন্তু তার আগে তার সম্পর্ক ছিল আব্বুর সঙ্গে। ওরা খুব বন্ধু ছিল, একসাথে পড়ত। কী এক ভুল বোঝাবুঝিতেই দূরত্ব, তারপর দুই কূলে দু’জন। পরে মিটমাট হয়ে গেছিল। বাবা তোপ্রায়ই যেত আপনাদের ওখানে।’
‘আংকেলের নামটা একটু বলবেন?’
‘আলাওল ইসলাম।’
আচ্ছা, মেয়েটা তাহলে আলাওল চাচার মেয়ে! ছোটবেলায় খুব আসতেন চাচা। শেষের দিকে কী একটা রোগ হয়েছিল, নাক বেড় দিয়ে সাদা হয়ে উঠছিল চাকার মতো। মা বলত, শ্বেতী। বাবা চলে যাওয়ার পর কমে গিয়েছিল তার আসা। সুমন যদিও তাকে বাবার বন্ধু হিসেবেই চিনত। মায়েরও যে পরিচিত সে, জানা ছিল না।
‘আপনি নিশ্চয়ই সুমি! দেশের বাইরে ছিলেন না? কবে এলেন?’
‘যাক, চিনেছেন তাহলে!’ বলল মেয়েটা। ‘এই তো মাস তিনেক আগে।’
কিছুক্ষণ চুপ থেকে শুরু করল এরপর।
‘পোড়ার ডিগ্রিটা আমার সবই কেড়ে নিলো। তিন বছর ভেবে গিয়েছিলাম, লাগল কিনা ছয়। ঝামেলাটা করোনাই বাঁধিয়েছে। প্রথম ধাক্কায়ই ঝরে গেল মা। তখন তো বিশ্বব্যাপী লকডাউন, বিমান চলছে না, শেষ দেখাটা দেখতেও আসতে পারিনি। সদ্য মা-হারা হওয়া বিদেশ বিভুঁই, একা থাকা, বন্ধু স্বজনের দেখা নেই- খুব ভেঙে পড়েছিলাম। সঙ্গে ছিল পড়াশোনার চাপ। ওদিকে বাবাও অস্থির হয়ে উঠেছিল। সঞ্চয়ের টাকা ভেঙে বাড়ি করেছে। বাকি যা ছিল, দিয়ে দিয়েছে ভাইয়ার বিজনেসে। এখন সে যদি না দেখে আমাকে! নিজহাতে তাই আমার বিয়েটা অন্তত দিয়ে যেতে চায়। না দিলে কী দুর্গতিই না হবে আমার! বোঝেনই তো, বাবা-মায়েদের মধ্যবিত্ত চিন্তা। ইনিয়ে বিনিয়ে এসবই বলত আমাকে ফোনে। আর বলত সুখী আন্টির কথা। কী এক অসুখ নাকি হয়েছে তার। দুশ্চিন্তা করত খুব। অবাক হবেন না, বাড়িসুদ্ধ সবাই আমরা জানতাম ব্যাপারটা। কথায় কথায় বাবাকে খেপাতামও। সুযোগ পেলে মাও তুলত আন্টির কথা। ‘কী, সুখতারাকে বিয়ে করাই ভালো ছিল, ভাবতেছো তো? ভাবো!’ বলত আর হেসে গড়িয়ে পড়ত মা। লজ্জায় আর রাগে তখন বেশ একখান দেখার মতো চেহারা হতো বাবার!’
বলতে বলতে হাসতে লাগল মেয়েটা। সুমনেরও কি যোগ দেওয়া উচিৎ? বুঝতে না পেরে চুপ থাকল ও।
‘পিএইচডির সময় মাথা ঠিক থাকে না, জানেন হয়তো। পরিস্থিতির কারণে আমার অবস্থা আরও খারাপ। মেজাজ খিটখিট। কিছুই ভালো লাগত না। বাবার জন্য দুশ্চিন্তা হতো, অথচ এ তা বকত বলে তার সঙ্গেও কথা বলতাম না ঠিকমতো। ওই কেমন আছে কী খবর এটা সেটা জিজ্ঞেস করেই রেখে দিতাম। নিজের জ্বালায়ই বাঁচি না, তাতে আবার এসব। আবার খারাপও লাগত। মা নেই, বাবার দিন কীভাবে কাটছে, আমি থাকলে দেখেশুনে রাখতে পারতাম। নিজেকে ব্যর্থ মনে হতো, স্বার্থপর মনে হতো। মাঝে মাঝে মনে হতো আত্মহত্যা করি। ’
নিজেকে একরকম ব্যর্থ মনে হয়সুমনেরও। কিছুই সে করতে পারল নামায়ের জন্য। অথচ বাবা মারা যাওয়ার পর একাই তাদের টেনে নিয়ে বেড়িয়েছে মা। আর বড় হয়ে সেই তারাই কিনা যন্ত্রণায় ডুবিয়ে মারল মাকে! ভাবলেই মনে হয় জ্বালিয়ে দেয় নিজেকে ও। কিন্তু তা যদি করা যেত..
‘এসবের মধ্যেই স্বস্তি নিয়ে এলো ডিগ্রিটা। কিন্তু দেশে যে আসব, তারও উপায় নেই। তখন আবার সেকেন্ড ওয়েভ করোনার। আবারও বিমান চলাচল বন্ধ। এর মধ্যেই একদিন দুম করে শুনি বাবা চলে গেছে। আমি আর ফিরব কার জন্য? ভেবেছি খুব। কিন্তু না ফিরে থাকবও বা কার কাছে? অবশেষে তাই ফিরেই এলাম। এলাম সেই ঘরে, যার প্রতিটা ইটে বাবা মায়ের রক্ত ও ঘাম লেগে আছে, অথচ তারা কেউ নেই। প্রথম ক’দিন পড়ে পড়ে কেঁদেছি শুধু। জোর করে ভাবিই আমাকে তুলে দেন, গোসল করান, খাওয়ান। একটু যখন বের হওয়া শুরু করেছি তারপর, চষে বেড়ালাম বাবার খোঁজে। বাবাকে যেখানে কবর দেওয়া হয়েছে, সেখানে যাই আসি। বাবা কী করত, শেষ দিনগুলো কীভাবে কেটেছে খোঁজ নিই। বাবার ডায়রি পড়ি। সারা দুনিয়ার চিন্তাভাবনা সব যেন লিখে গেছে সে। তারই একটা ভুক্তি থেকে জানলাম, আন্টিকে বৃদ্ধাশ্রমে দিয়েছেন আপনারা। সেখানে মাঝে মাঝে যেত বাবা। আন্টির সমস্যারও কিছুটা সেখানে লেখা। আর লেখা, ‘ছেলে-মেয়ে আর সংসারের জন্য জীবন নাশ করে শেষে এই অবস্থা! এর চেয়ে তো মরে যাওয়া ভালো।’ পড়তেই আমার মাথায় বাজ। নিজেও কি সে খুব ভালোভাবে ছিল না তাহলে!
‘অর্ক, আমার ভাইপো, ক্লাস ফাইভে পড়ে। ওর সঙ্গে এখানে ওখানে যাই, আর জিজ্ঞেস করি বাবার ব্যাপারে। ভাইয়াকে খোঁচাই। বোঝার চেষ্টা করি। ভাবি একটু বদরাগি, কিন্তু মানুষ ভালো। বাবাকে বাবার মতোই দেখত, বাবার জন্য এখনও কাঁদে। দিন যাচ্ছিল, আর আমার বাবার স্মৃতি হাতড়ানো কমছিল। প্রাইভেট একটা বিশ্ববিদ্যালয়ে জয়েন করেছি। বিয়ের দিন ঠিক হয়েছে। আয়োজন চলছে, এমন সময় খেয়াল হলো, একটা কুকুর আমাকে ফলো করে প্রতিদিন। গেট দিয়ে বের হচ্ছি, কুকুরটা হয়তো বসে আছে, গেটের পাশেই, বাগানবিলাস গাছের ছায়ায়, আমাকে দেখেই উঠে দাঁড়ালো। আমি চলছি, হাঁটতে হাঁটতে মোড় পর্যন্ত যাবে। আমি রিকশা নেবো, তাকিয়ে দেখব সে দাঁড়িয়ে আছে। আবার ফিরব যখন, তখনও দেখব মোড়েই বসে আছে, আমার রিকশা তাকে ক্রস করার আগেই ছুটতে শুরু করবে। অবসরের পর বাবা যখন ফ্রি, আমার মাস্টার্স চলছে, তখনকার বছর খানেক এমনই করত সে। আমি তাই আরও মনোযোগ দিলাম কুকুরটার দিকে। আমি চলে যাওয়ার পর কী করে, শুক্র শনিবার যখন বেরই হই না, তখন কী করে- খোঁজ নিলাম। জেনে অবাক হবেন যে, ঠিক বাবার মতোই সময় কাটে তার। বিকেলে বাবা হাঁটতে যেত। মসজিদের সামনে একট পোড়ো জমি আছে। ছেলেপেলেরার ফুটবল খেলে, বাবাও একসময় খেলত। বসে বসে খেলা দেখে কুকুরটা। সেখান থেকে উঠে আসার পথে করিম চাচার চায়ের দোকানের বেঞ্চের ঠিক যেখানে বাবা বসত, কোনার দিকে, সেখানে গিয়ে বসে। বাবা যেমন উচ্চস্বরে কথা বলত, জোরে জোরে তেমনই ঘেউ ঘেউ করে সে। তাড়িয়ে দিলে তেড়ে আসে উল্টো। কেউ যখন সিঙ্গাড়া কিনে নিয়ে যায়, কুকুরটা ছুটে যায় তার পিছু পিছু। বাবার খুব পছন্দ ছিল এই সিঙাড়া। এসব নিয়েই ভাবছিলাম একদিন। হঠাৎ আমার মনে হলো, বাবাই কি ফিরে এসেছেন এভাবে? জানি, বিশ্বাস হবে না আপনার। কিন্তু মরা গাছের গুঁড়িতে কি অন্য কোনো নতুন গাছ জন্ম নেয় না?’
মেয়েটাকে প্রথমে পাগল ভেবেছিল সুমন। তখন মনে হচ্ছে পাগলের চেয়েও বেশি কিছু। অবশ্য মায়ের যে অবস্থা, তার চেয়ে অবিশ্বাস্য ওর জন্য আর কী হতে পারে?
‘আমার নিজেরই তো বিশ্বাস হয় না মাঝেমাঝে। তবে আমি পরীক্ষা নিরীক্ষা করেছি খুব। যেমন, বলি, অফিসে না গিয়ে একদিন হাঁটতে হাঁটতে গোরস্তানের দিকে গেলাম। পেছন পেছন এলো কুকুরটা। গিয়ে আমি দাঁড়িয়ে থাকলাম র্যান্ডম এক কবরের কাছে, যেন জিয়ারত করছি। ওমা, কুকুরটা দেখি সালোয়ার টানতে লাগলে আমার। টানছে আর এগিয়ে যাচ্ছে, আমি নড়ছি না দেখে আবার আসছে আবার টানছে। যখন গেলাম, ঠিক ঠিক মায়ের কবরের পাশে নিয়েই দাঁড় করালো সে আমায়। আমার কান্না আর চিৎকারে সেদিন ভেঙে পড়েছিল পাড়া। তারপর একদিন গেলাম বাবার অফিসে। গিয়ে তার সহকর্মীদের সঙ্গে কথা বলছি, বাবা গিয়ে চাটতে লাগল ঠিকঠিক তার টেবিলেরই পায়া। চিন্তা করুন!’
‘আলাওল চাচা কি কুকুর পুষতেন শেষ বয়সে?’
‘আপনিও কি আমাকে পাগল ভাবছেন, নাকি বোকা? জীবনে আমাদের ছাড়া আর কাউকেই পোষেনি বাবা। কুকুর বরং অপছন্দই করত। সে কারণেই হয়তো কুকুর হয়েই এসেছেন আবার, কে জানে।’
বলে উদাস চোখে তাকিয়ে থাকল ডুবন্ত সূর্যের দিকে। চোখের কোলে সন্ধ্যা জমছে তার। দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলল সুমন। তার শব্দেই হয়তো, ফিরে এলো মেয়েটা।
‘যাহোক, যা বলছিলাম, পরের দিন কুকুরটা নিজেই আমাকে নিয়ে এলো এখানে।’
‘এখানে মানে?’
‘এই বৃদ্ধাশ্রমে, আপনার মায়ের কাছে।’
‘কী বলছেন!’
‘হ্যাঁ,’ গেটের সামনেই দাঁড়িয়ে থাকা বড় মেহেগনি গাছটা দেখিয়ে বলল, ‘ওটার কাছে আসতেই সে ছুট লাগালো জোরে। পেছন পেছন গিয়ে দেখি সে দাঁড়িয়ে আছে রুম নম্বর বিশ বাই ডি-তে। এক বৃদ্ধা ঘুমুচ্ছে খাটের নিচে। বাবার উপস্থিতি টের পেয়েই হয়তো ঘুম ভাঙলো তার। ভাঙতেই, কী বলব আপনাকে, সে এক দৃশ্য, বাবাকে জড়িয়ে ধরলো সে। কত যেন আপনার দুজনে দুজন তারা! বুঝে নিলাম, ইনিই সুখী আন্টি। তার শারীরিক রূপান্তরের কথা তো আর আমি জানতাম না। প্রথম দেখায় আমার চমকে ওঠার কথা। কিন্তু যে ভাষায় কথা বলতে লাগলো তারা, শুনে আমি চমকে উঠতেও ভুলে গেলাম। চমক ভাঙতেই দেখি, আমার দিকে তাকিয়ে আছে আন্টি, বাড়িয়ে রেখেছে হাত। আঙুলগুলো ছোট ছোট, গুঁটানো, পশুপ্রাণীর যেমন থাকে। পায়েরও সেই অবস্থা। যাবো কি যাবো না ভাবছি, ভয়ই পাচ্ছিলাম আসলে, দেখি ঘেউ ঘেউ করে উঠছে বাবা। তাড়া খেয়ে এগিয়ে গেলাম দ্রুত। আন্টি আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিলো। ক্যান্টিন থেকে একটু খাবার নিয়ে এলাম। দিতেই খেলো তারা দুই বন্ধু। আসার সময় মনে হলো আন্টি বলল, খুব স্পষ্ট না যদিও, ‘বেচে থাকো মা’। ওটুকু উচ্চারণ করতেও যে কত কষ্ট হয়েছে মুখের দিকে তাকিয়েই তা বুঝতে পারছিলাম। বাবার সঙ্গে কথা যা হওয়ার তা কিন্তু তাদের নিজেদের ভাষাতেই হলো।
‘সেদিনই প্রথম বাসায় নিয়ে তুললাম বাবাকে। ভাইয়া এলে সব বললামও, ভাবিও ছিলেন। হেসেই তারা উড়িয়ে দিলো আমাকে। অথচ আমরা খেলাম যখন, কুকুরটা বসে থাকল বাবার আরাম কেদারার পাশে, বারান্দায়। তাকিয়ে আছে ওপাশের গোরস্তানের দিকে, বাবার মতোঅবিকল। কাজ করতে করতে ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। জাগতেই দেখি সে শুয়ে আছে বাবা-মায়ের ঘরের দরজায়। ভাইয়াকে ডেকে দেখালাম। তবু বিশ্বাস করল না। এক চোট ঝগড়াও হলো। কোনো মতেই কুকুরটাকে তারা বাসায় থাকতে দেবে না। আমাকে পর্যন্ত মানসিক ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবে। এটা সেটা। শুনে সে যে কী অস্থিরতা বাবার! তার মুখের দিকে তাকিয়েই আমি বললাম, এই বাড়িতে আমার ভাগ আছে। আমার ভাগেই আমি থাকববাবাকে নিয়ে।
‘বুকের ভেতর একটা পাথর চেপে থাকত আমার, বাবা নেই; তার গায়ে এখন ঝিরি ঝিরি বয়ে যায় পাহাড়ি নদীর সুখ, বাবা ফিরে এসেছে!’
একফাঁকে ঘড়ি দেখল সুমন। কাঁটায় কাঁটায় এগিয়ে এসেছে রাত। তবু সে বসে থাকল চুপ, মনোযোগী শ্রোতা।
‘বিয়ের কেনাকাটা শুরু হয়েছে। যা-ই কিনি, নিয়ে এসে দেখাই তাকে। ঘেউ ঘেউয়ের মাত্রা দিয়ে সে তার পছন্দ অপছন্দ জানায়। আর আমাকে এগিয়ে দেওয়া, আনতে যাওয়া, করিম চাচার দোকানে বসা, বাসায় এসে থাকা, বারান্দায় বসা, আর প্রিয় দাদুর গান শুনে কাঁদা- সবকিছুই রুটিনমাপা।
‘এর মধ্যে একদিন অফিস থেকে ফিরছি, মোড়টা দেখি ফাঁকা। কোথায় যেতে পারে বাবা? নাকি শরীর খারাপ লাগছে বলে আসেনি? তা বাসায় ফিরেও দেখি নেই কোথাও। করিম চাচার কাছেও যায়নি, খেলার মাঠেও না। তাহলে? কী মনে করে যেন, মায়ের কবরে গেলাম, দেখি সেখানেই দাঁড়ানো তিনি, চোখে পানি। সেদিন চব্বিশ এপ্রিল, তাদের বিয়েবার্ষিক! ভাইয়াকে ডাকলাম। এসে সে দেখল সবকিছু, তবু তার ওই একই কথা, আমি পাগল হয়ে গেছি।’
‘খুব দোষ দিতে পারব না ভাইয়াকে।’ বললসুমন, ‘তার জায়গায় থাকলে আমিও হয়তো অবিশ্বাসই করতাম আপনাকে।’
‘আমার বরও এই কথা বলছে। ভেবেছিলাম এত বছরের প্রেম আমাদের, এত বোঝাপড়া, ও হয়তো বুঝবে। কিন্তু না, ভাইয়ার মতোই ওর ধারণা মানসিকভাবে আনফিট আমি। এই নিয়ে ঝগড়া হলো, আর আমাকে ও শর্ত দিলো ঘর করতে হলে কুকুরটাকে ত্যাগ করতে হবে। তা আমি কীভাবে করব?’
তারপর নীরব কিছুক্ষণ। অন্ধকার হয়ে এসেছে। উঠতে হবে। কিন্তু উঠবার কোনো তাড়না পাচ্ছে না সুমন। মেয়েটাও বসে আছে, যেন এখানেই ঘর তার এখানেই বাড়ি।
সুমন বলল, ‘সে কারণেই কি বৃদ্ধাশ্রমে নিয়ে এসেছেন?’
‘না। ঝগড়া করে তো আমি বেরিয়ে এলাম বাবাকে নিয়ে। দেখে খুব অবাক ভাই-ভাবি। তবে কিছুই বলিনি বিস্তারিত। সোজা গিয়ে বাতি নিভিয়ে ঘুম। সকালে উঠেই দেখি বাবা নেই কোথাও। নেই তো নেই। ঘরে বাইরে, করিম চাচার দোকান, গোরস্তান- কোথাও না পেয়ে যখন আমি কেঁদে ভাসাচ্ছি, যে পেয়ে ধন হারালাম আবার। তখনই মনে হলো আচ্ছা, আন্টির ওখানে যায়নি তো! তা এসে দেখি তিনি বসে আছেন এখানেই। ভাবুন তাহলে একবার, বাবা না হলে এমন কাজ কেউ করত? আমার ঘর ভাঙার ভয়ে নিজে তিনি চলে এলেন না? তাই ভাবলাম, ঠিক আছে, এখানে যদি ভালো থাকতে পারে তো থাকুক। কিন্তু এরা তো বলেই দিলো রাখবে না।’
আলাপ পরিচয়ের শুরু থেকে একবারও কুকুরটাকে দেখা যায়নি। দেখলে কী করত জানে না সুমন, তবে দেখেনি বলেই হয়তো সাহস করে বলল, ‘রাখবে না মানে! চলুন আমার সঙ্গে।’
নিরস্ত করতে চাইলো সুমি। ‘না, না, কোনো ঝামেলার দরকার নেই। এখানে না হোক, অন্য কোথাও রাখব।’
‘উঁহু, অন্য কোথাও না।’ উদ্গত হাসি চাপতে চাপতে বলল সুমন, ‘এখানেই মায়ের সঙ্গে থাকবে চাচা। কই তাকে খুঁজে আনুন।’
আসলেই তো, কোথায় গেল বাবা!
এখানে ওখানে গাছ, যেখানে সেখানে বাল্ব। গাছের গোড়ায় নিশুতি রাত, বাল্বের নিচে আলো। আলো আর আঁধারিতে চক্রাবক্রা হয়ে আছে চত্ত্বরটা। গেটের বাইরে চা-সিঙাড়ার টঙ। সারি সারি দোকান তার পাশে- মুদির, মিষ্টির, মাংসের, জুতোর।
কিন্তুবাবা নেই কোথাও। ভেতরে বাইরে জোর ছুটোছুটি চলছে মেয়েটার।
আহারে, বেচারি!
থাক, আলাপে প্রলাপে অনেক হলো বেলা। এবার যেতে হবে। যাবার আগে সুমন আরেকবার দেখতে গেল মাকে। এবং সেখানেই দেখা গেল কুকুরটাকে। তুমুল গল্প হচ্ছে মায়ের সঙ্গে তার। না কুকুরের না মানুষের- ভাষাও তাদের আশ্চর্য এক!
সাড়া পেয়ে কুকুরটা ফিরে তাকালো একবার। দেখেই চিনতে পারল সুমন। আলাওল আঙ্কেলের নাক বরাবর সাদা হয়ে উঠেছিল যে শ্বেতীর চাকা, কুকুরটার মুখেও ঠিক স্পষ্ট হয়ে আছে তা।
আরও পড়ুন- শহীদুল জহিরের গল্প

Mostafizur Rahman is a professional content writer at CrawlText, specializing in SEO articles, blog posts, and web copy that drive engagement and conversions. With experience crafting clear, audience-focused content for almost all the niches, he delivers well-researched, optimized pieces on deadline. He combines editorial rigor with keyword strategy to boost traffic, authority, and reader retention across blogs, platforms, and newsletters.
