সুশান্ত হালদার এর কবিতা
জন্মরোহিত ফুল
পুরুষ যতটা না স্বার্থপর তারচে’ ঢের বোকা
সে জানে
উত্থিত ফণার সৌন্দর্য বিতানে বিষের পুরিয়াই থাকে
তবুও সে সর্প খোলসে বেদেনীর ত্রিভুজস্তম্ভ দেখে
পপি রঙে রাঙা ঠোঁটে একঝলক মৃত্যুর সহবাসে
পুড়তে থাকে গন্ধমের মত লাল টকটকে অগ্ন্যুৎপাতে,
তোমরা যাকে ছাই বলো,আমি বলি ধ্বংস-স্তম্ভ তাকে
নারী যদি দেবী হয়,প্রণাম তাকে
মাতৃস্বরূপা বলেই দুগ্ধপোষ্য করে রেখেছ আজন্মকাল থেকে,
তুমি নারী!প্রেয়সী বলেই কি খড়্গ ধরেছ
পুরুষ কাটা মাথায় জন্মরোহিত ফুল ফোটাবে বলে?
একটি নিরেট আত্মহত্যার দৃশ্য
তিন টুকরো হয়ে পড়ে আছি
শেয়ালে শকুনে খেয়েছে শরীর
এই যে মুখ
যার অস্তিত্বে এখনও লেগে আছে হেমন্তর শিউলি ঝরা শিশির
খুলে নিয়েছে যে চোখ
দু’দণ্ড আগেই দেখেছিল পুরুষের কামড়ে স্তন ছেঁড়া নারী
যে হাতে ধরেছিলাম স্বপ্নচারিণী বালিকার আহত সন্ধ্যার ধূপ ধুনচি
সে হাত এখন হাড্ডিসার হয়ে ঘুরে ফিরে হায়েনার দলে
উদরের নিচে যা কিছু,সৃষ্টির রহস্য বলে লোকে
তাকেও বিষ পিপড়ায় খেয়ে নিয়েছে নিরামিষ ভোজী বলে
এখন যা কিছু ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে পৃথিবী নামক মহা মর্তলোকে
সেও এখন ছাই ভস্ম হয়ে ওড়ে বেড়ায় ধূলিধূসরিত আকাশে
এই দৃশ্যকল্পে যদি মনে করেন বেঁচে আছি
তাহলে মূর্খের বোকামি বলে
নিজেই নিজের সহমরণে ঝাপ দেব খলিফা বিল্ডিং থেকে!
অকালবোধন
শরতের মেঘ ভাঙা দুপুর
তুমি বললে
দেবীর আগমনী বারতায় আমাকে মেঘদূত হতে হবে
দক্ষিণে ঝড় উত্তরে সুনামি পশ্চিমে ক্ষতিগ্রস্ত মালভূমি
আর পূর্বে সেই রুদ্রমূর্তি সূর্যের অনর্গল অট্টহাসি
দশ দিগন্ত থেকে ভেসে আসছে ভয়ার্ত মানুষের নিধন যজ্ঞের শঙ্খধ্বনি
বিবস্ত্র নারীর কোলে পিঠে অগণিত দেবশিশুর আতঙ্কগ্রস্ত মুখে ভবিষ্যৎ হরণের অদৃশ্য হাতছানি,
এই ভয়াবহ দুর্যোগে আমি দেখলাম
উলম্বিত পৃথিবীর বুকে একদল অসুর গাছপালা নদী পাহাড় গিলেগিলে খাচ্ছে
শকুনের তাণ্ডবে সংসদ ভবন সচিবালয় মানিক মিয়া এভিনিউ ঝড়ে ওড়া কাগজের মত বিলীন হয়ে যাচ্ছে
আমি আরও দেখলাম
আমার মা-বেষ্টিত পর্ণকুটিরে সেই পাক হানাদার একান্ত উল্লাসে জয়ীতার বুকে চড়ে বসেছে
ফিনকি দেয়া রক্তে আমার সংহারিণী চামুণ্ডা যেন অশ্বারোহিনী
চোখে আমার পম্পেই নগরীর ধ্বংসস্তূপের সেই ভয়াবহ আগ্নেয়গিরি
রক্তাক্ত পায়ে দেখতে পেলাম কুরুক্ষেত্রের সেই প্রতিজ্ঞাবদ্ধ মুখে ফাল্গুনীর ভবিষ্যৎ বানী
ব্রহ্মাস্ত্র হাতে দেবীর স্তূতি করতে করতে নেমে এলাম দ্রাবিড় অধ্যুষিত আমার পূর্বপুরুষের নদীবেষ্টিত জন্মভূমি
যেখানে শুম্ভনিশুম্ভ নামক অসুরদ্বয় রাজ্যশাসনে নিজেরাই রাবণতুষ্টকারী
আমি মেঘবৃষ্টির করতলে নিজেকে অধিষ্ঠ করে
তিন তিনবার বজ্র স্মরণে ছুঁড়ে দিলাম ব্রহ্মাস্ত্র ‘অকালবোধনে’
তারপর……..
নিস্তব্ধতার এক গুমগুম শব্দে কে যেন বলে উঠলো
বৎস্য!তোমার একনিষ্ঠতায় আমি তুষ্ট হয়েছি
বলো! কি বর চাও তুমি?
অতি উজ্জ্বল আলোয় একনজর দেখে নিলাম নৈসর্গিক দেবী
কচিঘাসের পাতায় আলতো হাত বুলিয়ে চোখে চোখ রেখেই বললাম
দিবেই যখন,তখন……
ওই নিরাভরণ কুচযুগলে পুত্রবৎসল্যে মহাঘুমে নিদ্রাবনত করে রেখো ‘দেবী’
যাতে মানুষরূপী অসুর বধে সদা জাগ্রত হতে পারি!
আরও পড়ুন- সেঁজুতি জাহানের কবিতা