প্রচ্ছদসাহিত্য

মির্জা গালিবের কবিতা

মির্জা গালিবের কবিতা

১.

কীই বা এমন জ্ঞানী গুণী-

সেরা আমি কিসের ধনে

আকাশ আমার শত্রু হলো

হায়রে, গালিব, অকারণ।

 

২.

বর্ষা আঁধার রাত্রিগুলো

কাটবে বলো কোন আবেগে

তারা গোণার স্বভাব নিয়ে

দু’চোখ আমার রয় যে জেগে।

 

৩.

কানন দেখে মু্গ্ধ আমি

পুষ্প ছেঁড়ার ইচ্ছে তবু-

মন যে আমার পাপী বড়ই

ফুল-ফাগুনের স্রষ্টা প্রভু।

 

৪.

ভালোবাসায় জোর চলে না,

গালিব, এ সেই অগ্নি-কণা

জ্বালিয়ে দিলেই জ্বলে না যে,

নিভিয়ে দিলে নেভেও না।

 

৫.

সীমাহীন এ উদাস থাকা

আর কতো দিন হায়রে সখী,

বলবো আমি মনে ব্যথা-

তুমি শুধু শুধাবে- “কী?”

 

৬.

খুশী কিসের আমার ক্ষেতে

নাচলে শত মেঘের দোলা,

বজ্র জানি এখন থেকেই

খুঁজছে আমার ধানের গোলা।

 

৭.

আকাশ দেখেই স্মরণ করি,

আসাদ, আমি তারই কথা।

নিঠুর মুখেই দেখেছি তার

বিধাতারই নিঠুরতা।

 

৮.

তিক্ত কথক দুঃখী এমন

তাওতো বলা হয়নি তাকে,

কথা কি আর ফোটে তখন

ভাষাই যখন থমকে থাকে।

 

৯.

খোদা’র এ কোন কুদরেতে সে

আমার ঘরে এসছে আজ।

বারেক তাকে দেখি আমি

বারেক ঘরের দীনতা সাজ।

 

আরও পড়ুন- নকিব মুকশি’র কবিতা

 

১০.

মনে পড়ে কতোই চাওয়ার

অতৃপ্তি এই বুকে আছে,

খোদা, আমার পাপের হিসাব

চেওনা তাই আমার কাছে।

 

১১.

কেই বা জানে থামবে কোথায়

ছুটন্ত এই জীবন ঘোড়া,

না আছে এই হাতে লাগাম

না দু’পায়ে রেকাব্ জোড়া।

 

১২.

গালিব, ক্ষমার চোখেই দেখো

তিক্ত গানের এই কালিমা,

আজকে কিছু হৃদয়-বেদন

ছাড়িয়েছে সকল সীমা।

 

১৩.

কৃপা তোমার যখনই হয়

এই আমাকে নিও ডেকে।

অতীত কাল তো নই আমি যে,

ফিরবো না আর সেখান থেকে।

 

১৪.

পাথর তো নয়, হ্দয়ই তো

ভরবে না সে ব্যথায় কেন?

কাঁদবো আমি হাজারো বার

কেউ আমাকে কাঁদায় কেন?

 

১৫.

কতোই তো পাপ হয়নি করা

তার সাধুবাদ দাও আমাকে

কৃত পাপের জন্যে, হে রব,

শাস্তি যদি পাওনা থাকে।

 

১৬.

সুর আছো সেই সুরে ভাসো,

শরাবে ও ডুবতে পারো,

রুপের প্রেমে হওনা পাগল,

সাধুতা থাক অন্য কারো।

 

১৭.

মদ ছেড়েছি, গালিব, তবে

মাঝে মাঝে ছোঁয়াই ঠোঁটে

বর্ষাদিনে এবং রাতে

যখন চাঁদের জোৎস্না ফোটে।

 

১৮.

ধর্ম-কথা ধার্মিকতা

অনেক আছে তার প্রতিফল,

আমাও তা জানাই আছে

মন তবু সে পথে অচল।

 

১৯.

নিহত বাসনা লাখো

থাক ঢাকা এই মৌন প্রাণে

নিভে যাওয়া প্রদীপ আমি

নিঝুম কোনো গোরস্থানে।

 

২০.

না তার খবর কানে আসে

রুপও তো ভাসে না চোখে

একটাই মন-বিক্ষত সে

হাতাশা আর দুঃখ শোকে।

 

*অনুবাদ- মোহাম্মদ রফিকউজ্জামান

পড়ুন- পরমপাঠ সাহিত্য পত্রিকা

error: Content is protected !!