দীনা আফরোজের কবিতাগুচ্ছ
প্রেম
ভাঙা রাস্তায় পড়ে থাকা নবজাতকের চকচকে একপাটি জুতো হা করে তাকিয়ে ছিল রাস্তার দু’পাশে।
এ-গলি ও-গলি তন্নতন্ন করে তবুও তোমাকে পাওয়া গেলো না, তাই হয় তো ঐ একপাটি জুতোর জন্য কেউ আর এলো না।
তোমরা কি জানো অবশেষে, ছন্নছাড়া গর্তের মাঝখানে বসে এর ওর ছিটিয়ে যাওয়া ধুলোর বিবর্ণ শীৎকার শুনে মজ্জায় বসবাস করতে লাগলো ‘নর্দমাই প্রেম’।
ঝুলন্ত ঘুড়ি
উড়ন্ত সুতো; ঘুড়ি উড়াতে আকাশ গেলো
ছেঁটে ছেঁটে মেঘের কর্কট সীমান্ত পার হতে হতে এক সময় সুতোয় টান পড়ে; অবশিষ্ট সুতো ধরে আছে কে সে! যে অস্থির, টেনেটুনে ভেঙে দেয় ঘুড়ির কঙ্কাল।
দেখতে পাচ্ছি ঘুড়িটা ভোকাট্টা হয়ে ফিরেছে স্কুল চুরি করা বালকের ব্যাগে, শান্ত হয়ে ঝুলে ঝুলে।
শূন্যস্থল
সুড়ঙ্গ পথের অন্ধকার পার করে ছুটছে যে তৃষ্ণার্ত মহাসড়ক, তাকে থামায় সাধ্য কার;
শ্যামাচরণ- তোমার চোখ জন্মান্ধ অন্তরে অমাবস্যা, তাই ছায়াপুঞ্জে অগ্রহায়ণ লেগেছে; আর তারাহীন উল্কারমুখ পরিমিতির পরিধি মেপে দেখিয়েছো ভুল ব্যাসার্ধ, বর্গক্ষেত্র পার হওয়া গেল না আর!
তাই বুঝি, গুহামুখ বেয়ে যে সুর প্রতিধ্বনিত হয়, ছুটে আসে গর্তের গোপন কাণ্ড, পাতা ও শেকড়ের স্পন্দে, কেবল অন্তঃধমনী জানে- তোমার মূলে কতো বৃক্ষের উড়াল।
যেহেতু তুমি খসড়া করে পথ চলো, ও-পথের কোনো ডাকনাম নেই, আর আমি ডাকনামেই তোমাকে স্তব্ধ করতে চেয়েছি।
পারো যদি ওই বৃত্তের মাঝে দাঁড়িয়ে ছিঁড়ে ফেলো শূন্যের শূন্যস্থল।
নদী ভাঙার কারণ
ভালো নেই এই ব্রহ্মপুত্র, তুমি কি জানো?
এই শহরের একটা গলিও বলেনি ভালো থেকো, রোদ গলে গিয়ে রাত জেগে ওঠে, নিশ্চুপ চায়ের টঙ্গে।
চামড়া পট্টিতে ইগলু গন্ধ-
বাইরে ঘুরে গিয়ে ঘরবন্দি হওয়া তোমরা
ঘরের নিন্দায় গলগলে পাকা আম হয়ে যাও
ভেবে দেখো! কি দেয়নি এই ঘর; যদি অন্ধকার দিয়ে থাকে তবে সেখানে আলোও তো ছিলো, জোনাকির মতো।
যা তুমি দেখেও অদেখা হয়ে আছো; স্বীকারোক্তিতে এলার্জি– নদী তো ভাঙবেই!
রাস্তা
রাস্তা থাকলে তো গর্ত থাকবেই
যদি রাস্তা না থাকে যদি গর্ত না থাকে
তবে তুমি থাকবে কই আমি বা থাকবো কই!
ঘেঁষে ঘষে উঁচুনিচু সমান হয়ে গেলেও
ঘর্ষণে যা ক্ষয় হয় তার রঙ ধূসর
রাস্তায় দাঁড়িয়ে ফ্যাকাসে মুখ ধূসর রঙে মুড়িয়ে
তোমাকে অদেখা মনে হয়েছে, তার রঙ কিছু আমি মেখেছি তোমার মুখোমুখি দাঁড়িয়ে।
আরও পড়ুন- শায়লা সিমি নূরের মুক্তগদ্য