প্রচ্ছদসাহিত্য

তাজ ইসলাম এর কবিতা

একটা আওয়াজ হবেই

আমি দৃঢ় বিশ্বাস করি জীবন পুকুরে

পড়বে যখন এসে মৃত্যুর ঢিল

মাছেদের ঝাঁকে অকস্মাৎ ঢিলে

ঝুম আওয়াজের মতো

একটা বিশাল হইচই হবে।

 

ক্ষুদ্র দানা থেকে নিরবে উত্থান,

অনাদরে অযতনে বেড়ে ওঠা।

সবার অজান্তে দাঁড়িয়ে যাওয়া গাছ

পড়ে গেলে হবে তার বিকট আওয়াজ

প্রথম আওয়াজটাই ধুম করে পতনের তার।

 

আমি ধুম করে পড়ে গেলে

অজস্র পাখির কিচিরমিচির একটা হইচই হবে

আমি উধাও হয়ে গেলে অকস্মাৎ একদিন

একটা হইচই হবে পথিকের অন্তরে বিস্তীর্ণ ছায়ার

শ্রান্ত পথিক উদ্ভ্রান্ত হবে?

এইখানে একটা শীতল ছায়া ছিল

আহা কই গেল কই গেল!

শুরু হবে হাহাকার!

 

আমি দৃঢ় বিশ্বাস করি

মরে গেলে একটা ভীড় হবে

বেঁচে থাকতে এ ভীড় হলে

আহা গাছ নিজের শোকে কাতর

চোখগুলো দেখেও স্বস্তি পেতো।

 

আমি বটগাছ অকস্মাৎ

পড়ে গেলে রাস্তায়

দুপাশে গাড়ির জ্যাম বেঁধে যাবে

আমি কিছুই দেখবনা তখন

যেনো কাফনে মোড়ানো লাশ

জানাজায় আগত মুসুল্লি গিজগিজ চারপাশ।

 

বিশ্বাসে আমি দৃঢ় বটগাছ

ধুম করে পড়ে গেলে একদিন

অগনিত পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজ হবে

সবাই শুনবে সেদিন হাহাকার ধ্বনি

আমার কর্ণে কিছুই করবে না প্রবেশ

চোখেরা আমার কাফনের সাদা গেলাফের নিচে দিবে ঘুম

বিদায়ের বিউগলে কেঁদে কেঁদে

কাতর কাউকে দেখব না আমি।

আমি ছাড়া দেখবে সবাই

আমার জন্য আহাজারি শুধু আমিই দেখব না।

 

টাউন হলে  সাড়ম্বরে শোকসভা হলেও বিস্মিত হব না।

আমি দেবদারু গাছ পড়ে গেলে একটা আওয়াজ হবেই

অথবা  বুক পকেটের গুরুত্বহীন কয়েন

তবু উপোড় হলে ফ্লোরে হঠাৎ পড়ে গেলে

ঝনাৎ ঝনাৎ একটা আওয়াজ হবে।

 

চাঁদ এসে চমকায় বেলাজ এই খাটে

পাখির পালক মতো গোঁজা  শাড়ির কুচি

অবাধ্য আঙুল সব ভাজে বিলি কাটে

তুলোর বালিশ হেসে  করে নিকুচি

চাঁদ এসে চমকায় বেলাজ এই খাটে।

 

আঙুল তুরিতে রাত এক তারা দেহে

ঘুমের বিস্বাদ ঝেড়ে তুলে সুখ সুর

সুখের সাঁতারে রাত কেটে হয় ভোর

বাতাসে ভাসতে থাকে আজান  মধুর।

 

আঙুলের তুরিতে নাচে তবলচি রাত

রাত থেকে খসে পড়ে জোসনার ঘুম

বিছানায় অর্ধনগ্ন জোহরার পাশে

হারুত মারুত রাখে জমা প্রেম চুম।

 

রাত্রিগিটার আসে দিনের পরে

আঙুলের টোকা লেগে রাত্রিগিটারে

শাড়ির আঁচল, বুক নড়ে বারেবারে

যুবতি ঘুমের শাড়ি যেন খসে পড়ে।

বাজাতে ব্যস্ত থাকে পঞ্চ আঙুল

সুরের ইন্দ্রজালে কদাচিত ভুল

ভুল চালে নেচে যায় গিটারের তার

হারায় অবুঝ মন কিনারা ও কূল।

 

বিরহ গজল

একাকী ঘুমুতে গেলে বিবাহিত রাত

দাম্পত্য আশাগুলো সুবাসিত ঘ্রাণে

শূন্যতার সুরধ্বনি তোলে কানে কানে

কাটে বুক সযতনে দুঃখের করাত।

বালিশেরা মশকরা করে নানা ছলে

ক্রমাগত ভিজে গাল বিরহ গজলে।।

 

আরও পড়ুন- রায়ান নূরের কবিতা

error: Content is protected !!