প্রচ্ছদসাহিত্য

একগুচ্ছ ছড়া সিরাজুল ফরিদ

ঝাড়ুদার

সালমতালী ঝাড়ুদার

দিলটা ছিল যা উদার!

আপন কাজে চলতো সে

দুঃখ করেই বলতো সে,

সারাটা দিন ঝ্ড়ু দেই

বুকটা ভরা বারুদেই!

 

 

দুখী

দরজায় টোকা দিয়ে ঝাঁটা খায়

ডাস্টবিন ঘেঁটে যারা কাঁটা খায়,

গায়ে কারো নেই কোন পরিধান

হাত পেতে পায় না যে কড়ি দান!

ঠান্ডায় দেহখানি জমে যায়

ভাবে ওরা-

ঝাঁপ দিলে দুখ বুঝি কমে যায়?

 

সোজানয়

খুব সোজা পুঁটি মাছ ধরতে

খালি পেট পানি খেয়ে ভরতে।

খুব সোজা সোজা পথে হাঁটতে

ডাস্টবিনে পঁচা বাসি ঘাঁটতে।

খুব সোজা ছোট লোক সাজতে

বড়দের থালাবাটি মাজতে।

সোজা নয় কুঁড়ে ঘর সাজানো

জীবনের একতারা বাজানো।

 

দিন কাল

দিন কাল ভালো নেই

ঘরে তার চালও নেই

পথ পথে হাঁটে আর ডানে বায়ে চায় সে

রাস্তার কল থেকে শুধু পানি খায় সে।

 

ধাঁধা

খুশির বানে আটখানা

দেখলে ছেলের ঠাঁট খানা?

হাতের ছড়ির বাঁটখানা।

ছড়ির বাঁটে ঝকমকি

জ্বালায় কেমন চকমকি

ছোটায় ঘোড়া টকমকি।

দেখলে তাকে চোখ ধাঁধায়

ছেলে বুড়ো সব কাঁদায়।

 

ছুন্নতি

দাদা আমা ছু্ন্নতি

দেশের কাজে চেষ্টা করেও

হয়নি তেনার উন্নতি।

ভাগ্য ফেরান ছক্কাতে

হজের টিকেট পেয়েই তিনি

সফর করেন মক্কাতে।

মক্কা থেকে ঢাক্কা

প্রতি বছর ঘোরান তিনি

হাওয়া গাড়ি চাক্কা।

 

হালাল

একাত্তরের খুন খারাপি

সব-ই ছিল হালাল

খান সাহেবের মুখের ভাষায়

মুক্তিরা সব দালাল!

খান সাহেবের যাদুর ফানুস

উড়িয়ে দেবেই দেশের মানুষ।

 

নোটিশ

লোকটা ভালো একাত্তরে রাখতো মাথা

খান সেনাদের চরণে

নাম করেছে রাত বিরাতে মায়ের বোনের

ইজ্জত ও মান হরণে।

লোকটা বলে- ট্রেনিং জমা দেইনি আজো

পরের অধীন বরণে

বাপকা বেটা, পাঞ্জাবী খুন গাত্রে বহে

ভয় করে না মরণে।

 

বিচ্ছুরা

একাত্তরে থাকতো যারা খন্দকে

আটাত্তরে ওদের চোখে মন্দ কে?

যুদ্ধ জয়ী মুক্তি সেনা বিচ্ছুরা,

বিচ্ছু আমার বুকের মানিক বিচ্ছুরে

দুখের দিনে ভাবিস নাতো কিচ্ছুরে।

পারিস যদি ওদের মুখেই দিস পুড়া।

 

মায়ের ডাক

মায়ের চোখে জল ছিল না

যখন মরে ছেলে

কলজেটা তার ঝাঁঝরা করে

একাত্তরের শেলে!

কোথায় ছেলের কবর খানা

দস্যু দলের সবই জানা

ঐ কবরেই খুনী দালাল

রক্তে হোলি খেলে।

রক্তে মায়ের ডাক

ঐ দালালের শব সাজাতে

কবর খুঁড়ে রাখ।

 

আরও পড়ুন- একগুচ্ছ ছড়া- সাবিনা সিদ্দিকী

error: Content is protected !!