উইলিয়াম কেরীকে নিবেদিত কবিতা

কালো কালির চিকা

মোফাজ্জল করিম

তোমার বাইবেলের ভাষায় বলিঃ

অতঃপর তিনি বলিলেন ‘পড়,

পড় এবং লিখো আমি তোমাকে ভালোবাসি

ভালোবাসি সকল মানুষকে, ভালোবাসি ঈশ্বরকে’।

ইহা শুনিয়া তাহারা দাঁত বাহির করিয়া

হাসিতে লাগিল এবং তোমার দিকে অঙ্গুলি

নির্দেশ করিয়া কহিল, ‘এই পাগলটা কিডা রে?

ইডার জোব্বা ধরি পুকুরের মধ্যি চুবাইয়া দাও’।

 

তারা তোমাকে পুকুরের জলে চুবিয়ে দিলো

তুমিও তাদেরকে চুবিয়ে দিলে-

ভালোবাসার জলে। আর তাদের বাংলা নামের

শ্যামলা মেয়েটাকে তুমি সাদা জমিনের

ওপর কালো বুটিদার একটা শাড়ি দিলে পড়তে।

ওরা তখন ছড়া কাটলোঃ

বাংলা পেলো কালো বুটির শাড়ি

পাগল বাবা আর কি থাকে আড়ি?

 

তারপর এই রক্তচোষা ভূশণ্ডির এই মাঠে

দেখদে দেখতে কালশিটে এই শতাব্দীও কাটে

কোথায় কেরী কোথায় বা তার ছাপাখানার কল

এখন দেখি দু’চোখ বেয়ে দুঃখ অবিরল

অঝোর ধারায় কেবল ঝরছে বারোমাস

সেই ইতিহাস

কে্উ লেখে না লিখছে মহাকাল

বাংলা মা তোর শাড়ির কোণে জমছে রে জঞ্জাল-

 

কেরী, ঈশ্বর তোমার মঙ্গল করুন বা না করুন

তাতে কিছু যায় আসে না

আমি তোমার সমাধির সন্ধান পেলে

সেখানে কালো ‘চিকা’ মেরে লিখে দেবোঃ

“যীশুর প্রেমে মগ্ন কেরী বাবা

শিখিয়ে দিলো কালো কালির প্রেম

বাবা নিলো কালোর অমোঘ থাবা

প্রেম এখনো প্রজ্বলিত হেম”।

 

 

উইলিয়াম কেরী

আবদুল মান্নান সৈয়দ

ব্যক্তিজীবনের রন্ধ্রহীণ অন্ধকার থেকে

একটি লতার মতো উঠে গেছো সূর্যের উদ্দেশে;

দেখে গেছোঃ যতোদূর চোখ যায় নীলাভ্র বিছোনো

এই বঙ্গদেশে।

 

অসীম মমতা ছিলো বুক ভ’রে,

ধর্মপ্রচারকের চেয়ে তোমার নিজস্ব ধর্ম ছিলো বৃহত্তর।

ইংল্যাণ্ড থেকে ছুটে এসে,

দীন বাংলায় তুমি করেছিলে জড়ো

 

রাশি-রাশি স্বর্ণশস্য- স্তূপাকারে।

কর্মেল ভিতর দিয়ে তোমার অবিনশ্বরতা

একটি নদীর মতো ব’য়ে যাচ্ছে বাংলাদেশে- ব’য়ে যাবে।

কে ভুলবে তোমাকে? তোমার কীর্তির কথা?

 

কেরীবন্দনা

নির্মলেন্দু গুণ

আর দেরী নয়, এবার তোমাকে নিয়ে লেখা যাক

সেই কবিতাটি- যার কথা ভেবে তুমি একদিন

স্বদেশের মায়া ত্যাগ করে এই অচেনা অদেশে এসে,

ভালোবেসে গড়ে তুলেছিলে তোমার ভুবন।

 

পঞ্চানন কে ছিল তোমার?– কিছুই ছিল না।

বাংলা ভাষা কী ছিল তোমার?– কিছুই ছিল না।

 

তবু তোমার অক্লান্ত শ্রমে-প্রেমে, মেধা ও মননে তুমি

আমার ভাষার বুকে দিয়েছো সাহস, পদতলে মাটি।

কে বলে ইংরেজ তুমি, বিদেশী-বেনিয়া, পাদ্রী শুধু…

প্রকৃষ্ট বাঙালি তুমি, রবীন্দ্রনাথের চেয়ে বেশি খাঁটি।

 

আরও পড়ুনএকগুচ্ছ পুরোনো প্রেমের কবিতা

Similar Posts